প্রেগন্যান্সিতে অতিরিক্ত ওজন আপনার নর্মাল ডেলিভারিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে!!
জি ঠিকই দেখেছেন। আমাদের দেশে খুব কমন একটা ব্যাপার দেখা যায় যে প্রেগন্যান্সির সময়ে মেয়েরা প্রায় ১৬-১৭ কেজি ওজন বাড়িয়ে ফেলেন, ক্ষেত্রবিশেষে আরও অনেক বেশি। দেখা যায় ৫ ফিট ওজনের একজন মেয়ে প্রেগন্যান্সির সময়ে ৫০/৫২ কেজি থাকলেও ডেলিভারির সময় তার ওজন গিয়ে দাঁড়ায় ৭০+, এবং ফলাফল সিজারিয়ান ডেলিভারি। ১ম ট্রাইমেস্টারেই ৪/৫ কেজি গেইন করে দেখা যায় শেষ ট্রাইমেস্টারে এসে ডায়াবেটিস ধরা পরে।
প্রেগন্যান্সিতে অনেকেই হিমশিম খান কীভাবে ওয়েট ম্যানেজমেন্ট করবেন। কি ধরনের খাবার খেলে ওয়েট বাড়বে না। আজকে সেগুলো নিয়েই কথা বলবো।
১) প্রথমেই রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট এর পরিমান কমিয়ে দেয়া। সাদা চাল,আটা বাদ দিয়ে লাল চালের ভাত, ওটস, রাগী আটা এগুলো তে শিফট করা।
২) প্রেগন্যান্সির প্রথম দিকেরসময় টায় অনেকেই মাছ মাংস খেতে পারেন না। গন্ধ লাগে। সেক্ষেত্রে ডিরেক্ট মাছ মাংস রান্না করে না খেয়ে এগুলো দিয়ে কোফতা, কাবাব টাইপের রেসিপি বানিয়ে নেয়া এবং সম্ভব হলে গরুর দুধ খেতে পারেন।
৩) প্রেগন্যান্সির সময়ে আমাদের ম্যাক্সিমাম মানুষের একটা প্রবনতা থাকে অতিরিক্ত ফল খাওয়ার। যেন ফলের মধ্যেই সব পুষ্টি আছে। বিশেষ করে কলা, খেজুর প্রেগন্যান্সির সময়ে মেয়েরা খুবই পছন্দ করেন। আদতেএই ফল গুলোতে অল্প কিছু ভিটামিনের সাথে প্রচুর স্যুগার থাকে। যারা আপনার ওজনকে ট্রীগার করে।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস কতটা বিপদজনক
৪) ডায়েটে সব ধরনের ভেজিটেবলস (পেঁপে, মিষ্টিকুমড়াএবং সজিনা বাদ দিয়ে)এবং ডাল এড করা।
৫) আমরা সব খাবার মোটামুটি খেলেও যেটা সব থেকে বেশি এভয়েড করি সেটা হচ্ছে হেলদি ফ্যাট। আপনি কি জানেন আপনার বাচ্চার ব্রেইন ডেভলপমেন্ট এ হেলদি ফ্যাটের ভুমিকা সব থেকে বেশি?? ডায়েটে ঘী, বাটার, অলিভ অয়েল যোগ করা।
৬) প্রেগন্যান্সির ১৬ সপ্তাহ কমপ্লিট হলে হালকা পাতলা এক্সারসাইজ করার ট্রাই করা।
আমাদের এভারেজ ওয়েটের একজন নারীর ১ম ট্রাইমেস্টারে ১৮০০, ২য় ট্রাইমেস্টারে ২২০০ এবং ৩য় ট্রাইমেস্টারে ২৪০০ ক্যালরির মত দরকার হয়৷ চেষ্টা করতে হবে এই টোটাল ক্যালরির ২০-২৫% যেন সরাসরি কার্বোহাইড্রেট (ভাত,রুটি), ২৫-৩০% প্রোটিন( মাছ, মাংস, ডিম দুধ) এবং বাকিটা ফ্যাট থেকে আসে।
প্রেগন্যান্সির সময়ে ওয়েট ম্যানেজমেন্ট কি শুধু নরমাল ডেলিভারি হবার জন্যই জরুরি??
- না। প্রেগন্যান্সির সময়ে অতিরিক্ত ওজন শুধুমাত্র যে নরমাল ডেলিভারি হবার চান্স কমিয়ে দেয় এমনটা না, সাথে সাথে পরবর্তী সময়ে ডায়াবেটিস, হৃদরোগের মত ঝুঁকি বাড়ায়।
- অনেকেরই দেখা যায় প্রেগন্যান্সির শেষের দিকে এসে ডায়াবেটিস ধরা পরে এবং এটা সারাজীবন থেকে যায়।
- আপনি ফুল প্রেগন্যান্সিতে যে ধরনের খাবার খাবেন সেটার প্রভাব আপনার বাচ্চার উপরে সারাজীবন থাকবে। এই খাবারগুলো বাচ্চার হাড়,ব্রেইন ডেভলপমেন্ট এ হেল্প করবে।
- চেম্বারে অনেকে ৭/৮ বছরের ছোট বাচ্চা নিয়ে আসেন যাদের দেখি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এর উপসর্গ আছে এবং হিস্ট্রি শুনতে গিয়ে দেখি অধিকাংশ বাচ্চার মা প্রেগ্ন্যাসির সময়ে ওভার ওয়েট ছিলেন।
প্রেগন্যান্সির সময়ে ওজন অবশ্যই বাড়াবেন তবে সেটা অবশ্যই হেলদি উপায়ে এবং যতটুকু বাড়াতে হবে ঠিক ততটুকু।
এই সময়টা ক্রুশিয়াল। শুধুমাত্র আপনার জন্য না আপনার বাচ্চার জন্যেও। মনে রাখবেন আপনার খাদ্যাভ্যাস এর বোঝা আপনার সন্তানকে বয়ে বেড়াতে হবে সারাজীবন। তাই প্রেগন্যান্সির সময়ে সম্ভব হলে ১৬ সপ্তাহ থেকেই একজন নিউট্রিশনিষ্ট এর পরামর্শে থাকুন। নিজে সুস্থ থাকুন, আর আপনার বাচ্চাকেও একটা সুস্থ সুন্দর জীবন উপহার দিন।
সুমাইয়া শিলা
চাইল্ড এন্ড রিপ্রোডাক্টিভ নিউট্রিশন কনসালট্যান্ট
থাইরোকেয়ার কন্সালটেশন সেন্টার
বনানী, ঢাকা।