মেনোপজ কি?
মেনোপজের প্রভাব আলোচনা করার আগে জেনে নিই মেনোপজ কি। মেনোপজ হলো নারী দেহের একটি হরমোন জনিত পরিবর্তনের নাম। ইস্ট্রোজেন নামক একটি হরমোন নারী দেহের গঠন ঋতু চক্র সন্তান ধারণ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে নারী দেহের ইস্ট্রোজেন হরমোন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে মাসিক বা ঋতু চক্র স্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থা কে মেনোপজ বলে।
মেনোপজের সময় এগিয়ে আসার সাথে সাথে দেখা যায় নারীদের নিতম্ব ও উরুর দিকের মেদ কমে আসা শুরু করে, পক্ষান্তরে বাড়তে শুরু করে পেটের ওপরের দিক ও মাঝের দিকের মেদ।
সোয়ান স্টাডি নামে একটা বিখ্যাত গবেষনা আছে যেখানে দেখা যায়, মেনোপজ শুরুর আগে যে পেরিমেনোপজ থাকে, ঐ সময় থেকেই নারীরা গড়ে বছরে দেড় কেজি করে ওয়েট গেইন করতে শুরু করেন যতদিন না পর্যন্ত তারা টোটাল এভারেজ দশ কেজি ওয়েট গেইন করেন।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে নারীদের এই অতিরিক্ত দশ কেজি ওজনের প্রায় পুরোটাই হয় ভিসেরাল ফ্যাট। যে মানুষটা একা দশ হাতে সংসার চালিয়েছেন, হঠাৎ তিনি হয়ে যান নিস্তেজ, খিটখিটে মেজাজের, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাপ্রবন, অত্যন্ত ইমোশনালি সেন্সিটিভ, সন্দেহপ্রবণ এবং অনেকক্ষেত্রেই ডায়বেটিক।
কেন এই সমস্যা??
কারন, এই সময়ে নারীদের এস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোন লেভেল দ্রুত কমে যেতে শুরু করে। বিশেষভাবে এস্ট্রোজেনের আছে ইনসুলিন সেন্সিটিভিটির ওপর শক্তিশালী প্রভাব। মূলত এস্ট্রোজেনের কারনেই কিন্তু নারীরা পেটের মাঝ বরাবরের চেয়ে ত্বকের নিচে বেশি ফ্যাট গেইন করেন, আর পুরুষরা সাধারনত ত্বকের নিচের চেয়ে পেটের মাঝ বরাবর ফ্যাট গেইন করেন।
মহিলাদের সৌন্দর্য দ্রুত নষ্ট হওয়ার কারণ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স
ফলে এস্ট্রোজেন হারানোর সাথে সাথে আমাদের মা খালাদের ফ্যাট গেইনের স্পট বদলে যাওয়া শুরু করে। তাদের দেহের মাঝখানটা ভারী হয়ে যায় এবং তারা হারিয়ে ফেলতে থাকেন নারীসুলভ শারীরিক ও মানসিক সৌন্দর্য। অনেকেই ডায়বেটিস, ফ্যাটি লিভার, ডিজলিপিডেমিয়া ও হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত হতে শুরু করেন।
এখন, এটা বন্ধ করার উপায় কি??
স্যরি, আমি হরমোনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির পক্ষের মানুষ না।
এটা সম্পুর্ণ বন্ধ করা সম্ভব না হলেও এস্ট্রোজেনের অভাবজনিত কারনে যে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হয়, তা ঠেকানো এবং এই এক্সট্রা দশ কেজি ওয়েট গেইন ঠেকানোর কিছু উপায় আছে।
১)পরিমিত পরিমানে ন্যাচারাল এস্ট্রোজেন সমৃদ্ধ বা এস্ট্রোজেন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এম্ন খাবার খাওয়া, যেমন সয়, ভুট্টা, চীনা বাদাম, কাজুবাদাম আখরোট, তিলের বীজ, তিসির বীজ, আপেল, কমলা, ডালিম, বেরি, চেরি ফল ইত্যাদি।
২)প্রজেস্টেরন স্বাভাবিক রাখে এমন খাবার, যেমন সূর্যমুখী বীজ, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, বুটের ডাল, সজনে, ক্রুসিফেরাস সবজি, গাঢ় সবুজ শাক, কাঠবাদাম, আখরোট, কলিজা ইত্যাদি।
৩)ডিমের কুসুম, এক্সট্রা ভার্জিন নারিকেল তেলসহ নিরাপদ স্যাচুরেটেড ফ্যাট ইনটেইক বাড়ানো। (অনেকেই হয়তো জেনে থাকবেন, ২০১৫ সালের পর থেকে আমেরিকান ন্যাশনাল ডায়েটারি গাইডলাইনে ফ্যাটের ওপর যে কঠিন রেস্ট্রিকশন আগে ছিল তা সায়েন্টিফিক এনালিসিসের ভিত্তিতে কমিয়ে আনা হয়েছে)।
৪)হলুদ, রসুন, গোলমরিচ, লবঙ্গ, অশ্বগন্ধার মত মসলা ও ভেষজ উপাদান ব্যবহার করা
৫)স্ট্রেস ফ্রি সময় কাটানোর চেষ্টা করা বা ইয়োগা করা
৬)হালকা গতিতে লম্বা সময় ধরে কার্ডিও করা
৭)ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার যেমন তৈলাক্ত মাছ, রেড মিট নিয়মিত গ্রহনের চেষ্টা করা
৮)বায়োটিন-ফোলেট যথেষ্ট পরিমানে ইনটেক করা
৯)ভিটামিন ডি ও ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট রেকমেন্ডেড নিউট্রিশনাল ডোজ হিসেবে নিয়মিত গ্রহন করা
১০)সন্ধ্যা ৭টার পর কোন খাবার না খাওয়া
এই দশটা কাজ যদি করা হয় নিয়মিত, ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সেও আপনি অতিরিক্ত মুটিয়ে যাবেন না ইনশা আল্লাহ।
যাদের ইতোমধ্যেই হাইপোথাইরয়েডিজম বা ওপরের সমস্যাগুলো রয়েছে, তারা এসব ব্যাপারে অবশ্যই প্রফেশনাল নিউট্রিশনিস্টের কনসাল্টেশন গ্রহন করবেন।