আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত একটা ব্যাপার আছে যে সেইম এইজ বিয়ে করা যাবে না বা বয়সে ২/১ বছরের বড় মেয়ে হলে তো কথাই নাই৷ বাবা রে বাবা দূরে দৌড়াও; যে যেনো সাত খুনের সমান। বিয়ের ব্যাপারে এই ভাবনার কারন যতটা না বেশি মানসিক বা ম্যাচিউরিটির তার থেকে অনেক বেশি শারিরীক। আমাদের দেশে একটা সকলেরই বদ্ধমূল ধারনা যে মেয়েদের শারিরীক বার্ধক্য তুলনামূলক আগে আসে ছেলেদের থেকে এবং এই কারনে মেয়ের সাথে ছেলের বয়সের পার্থক্য ১০ বছর হলেও এটা তেমন কিছুই মনে করা হয়না।
এখন আমি যদি আপনাকে বলি আমাদের দেশের মেয়েরা আসলে বুড়ো হয়না, তাদের বয়সের আগেই বুড়ো বানিয়ে দেয়া হয় তাহলে কি মানবেন আপনি??
আপনার মনে হতে পারে আমি এগুলা কি বলছি? জোর করে বুড়ো বানায় কি করে? এটাও কি সম্ভব? আজগুবি কথা, তাই না?
অবশ্যই সম্ভব। চলুন এক্সপ্লেইন করি!!
আমাদের দেশে মেয়েদের খাদ্যাভ্যাসের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় মেয়েদের ভাত খাওয়ার প্রবনতা বেশি হলেও প্রোটিন এবং ফ্যাট গ্রহন করার প্রবনতা পুরোপুরি তার উল্টো এবং আফটার ৩০ বা বাচ্চা হওয়ার পরে এটা আরও কমে যায়। এর কারন কিন্তু এটা না যে মেয়েরা খেতে পারে না, এর মুল কারন হচ্ছে আমাদের পূর্ব পুরুষদের প্রাকটিস এবং মেয়েদের স্যাক্রিফাইসিং মেন্টালিটিকে দিনের পর দিন চেরিস করে মেয়েদের এগুলা করতে ইন্সপায়ার করা।
এখন এই জিনিসটাও একটু ব্যাখ্যা করা যাক!!
- আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে একটা প্রবনতা ছিলো ভালো মাছ টা,ভালো মাংসের টুকরো টা, ডিম দুধ খাওয়ার অধিকার ছিলো বাড়ির কর্তার বা ছেলে মানুষের। এমনকি বাড়ির সকলের খাবার পরে যা বাকি থাকে সেটাই মেয়েদের খেতে হতো। সবার সাথে এক সাথে বসে সেইম খাবার খাওয়া টাকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ বলে গন্য করা হতো এবং দীর্ঘদিন এই খাদ্যাভ্যাস প্রাকটিস করার জন্য মেয়েদের শরীরের মাসেল মাস কমে আসে, কোলাজেন সিনথেসিস কমে যায়, স্কিন কালো হয়, ফ্যাকাসে হয়ে যায়,ফ্যাট না খাওয়াতে চামড়া কুচকে আসে, সেক্স ড্রাইভ কমে যায় এবং আফটার ৩৫ অস্টিওপরোসিস, হাতে পারে ব্যাথা, লো ভিটামিন ডি + আরো অনেক ডিজিজ খুবই কমন! আর ফলাফল!! ওইযে বয়সের আগেই বার্ধক্য টেনে ধরে তাকে। যেই সময়টায় সব থেকে বেশি স্ট্রং থাকার কথা ঠিক তখনই তার শরীর ভাঙা শুরু হয়।
মহিলাদের সৌন্দর্য দ্রুত নষ্ট হওয়ার কারণ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স
আর এর সাথে ঘরের কাজে মহিলাদের সাহায্য করা যাবে না; সাহায্য করলে পুরুষত্ব দ্বিধার মধ্যে পড়ে যাবে এটা তো নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিলো!
এবার আসি যে এটা তো পূর্বপুরুষদের কথা বললাম, আমরা আসলে কি করি?? আমাদের মাঝে কি কোনো পরিবর্তন হয়েছে??
-না হয়নি। যুগ বদলেছে। কিন্তু মেয়েদের মধ্যে থেকে এই আচরণ বের করে দেয়া সম্ভব হয়নি। ২৪-২৫ বছরের একটা মেয়ের খাদ্যাভ্যাস মোটামুটি ঠিক থাকলেও, যখনই তার বড় ভাই বা বাবা বাসায় থাকলে মাছের টুকরো ২ টা হলে সেটা বাবা বা ভাইয়ের প্লেটেই উঠে। মেয়েটাকে শেখানো হয় যে তোমাকে স্যাক্রিফাইস করতে হবে, এটাই মেয়েদের লাইফ এবং এটা দিনের পর দিন হয়। কখনোই ওই মাছ মা বা বোনের প্লেটে ওঠে না। আবার অনেক সময় মাছ দুই টুকরো বেশি থাকলেও মা অন্য সবজি দিয়ে ভাত খেয়ে নেন যাতে সকালে স্বামী এবং ছেলের প্লেটে সেটা দিতে পারেন। এই শিক্ষাটা আমরা আমাদের মায়ের থেকে পেয়ে আসছি এবং আমাদেরকেও এই একই কাজ করতেই বলা হয়।
আপনি চেরিশ করেন যে আপনার মা খাচ্ছে না বউ খাচ্ছে না আপনার জন্য রেখে দিচ্ছেন কিন্তু আপনি কি কখনো বলেছেন আম্মু তোমার বয়স হয়েছে তোমার এটা খাওয়া দরকার, এই এক গ্লাস দুধ আমার থেকে তোমার বেশি খাওয়া দরকার। না আপনি বলেন না। আপনি ফেইসবুকে এসে ছবি পোস্ট করেন মায়েরা এমনই!!
হ্যা মায়েরা এমনই হয়। তবে আপনার সামর্থ্য থাকলে আপনার আম্মা এক টুকরো মাছ পাতে তুলছে কিনা খোঁজ নিন, রেগুলার দুধ খাচ্ছে কিনা খোঁজ নিন। যদিও এই যুগে ছেলেরা বউদের খাবারের দিকে বেশ ভালো নজর দেন বাট সেই নজর টা বউ থেকে মা হয়ে যাবার পরে চলে যায়!
আমাদের দেশে মহিলাদের গড় আয়ু পুরুষ দের থেকে বেশি৷ কিন্তু তাদের খাদ্যাভ্যাস এর জন্য তারা পুরুষদের থেকে আগেই বুড়িয়ে যেতে শুরু করে। বলা হয় মেয়েরা কুড়িতে বুড়ি হয়। না ভাই মেয়েরা কুড়িতে বুড়ি হয় না, বুড়ি বানানো হয়। এমনকি বলা হয়ে থাকে মেয়েদের সব থেকে সুন্দর লাগে ৩৫-৪০ বছর বয়সে। বলিউডে ৫০+ এইজের নায়িকাদের দেখে হা করে থাকেন। তবে কিছু ট্রীটমেন্ট তো থাকেই; তবে তা বাদে তারা ইয়াং থাকেন তাদের ফুড হ্যাবিটের জন্যই। আপনার আমার আম্মুও বুড়িয়ে যায়নি আমরা তাদের বুড়িয়ে যেতে ইন্সপায়ার করছি।
এরপর থেকে খেতে বসলে আগে দেখবেন আপনার প্লেটের সাথে সাথে মাছ/ মাংসের টুকরো টা আপনার মায়ের প্লেটে, আপনার বোন বা বউয়ের প্লেটে উঠলো কিনা!!
সুমাইয়া শিলা
নিউট্রিশনিষ্ট
চাইল্ড এন্ড রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ কনসালট্যান্ট
বিএস, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।