মহিলাদের ভালো ঘুম না হওয়ার কারণ ফিমেল সেক্স হরমোন

 

মহিলাদের ভালো ঘুম না হওয়ার কারণ ফিমেল সেক্স হরমোন

ফিমেল সেক্স হরমোন কি মহিলাদের ঘুমের উপর প্রভাব ফেলে?

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঘুমের পরিমাণ ও কোয়ালিটি কমতে থাকে, তবে পুরুষ ও মহিলাদের ঘুমের অভিজ্ঞতায় যে পার্থক্য দেখা যায় যেগুলো মূলত বয়ঃসন্ধির সময় থেকে শুরু হয়।

বয়ঃসন্ধিকালে শুরু হওয়া মাসিক চক্র থেকে  মেনোপজ পর্যন্ত হরমোনাল আপ-ডাউন বা ফ্লাকচুয়েশান এর কারনে মেয়েদের নানা শারীরিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এ হরমোনাল শিফট গুলো ঘটার সময় দেখা দেয় ঘুম সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা, যেমন- ইনসমনিয়া, স্লিপ এপনিয়া ইত্যাদি। 

মেন্সট্রুয়েশান সাইকেল এর নির্দিষ্ট সময়ে অনেকেই দেখা যায় ঠিকমতো ঘুমাতে বা একটানা ঘুমাতে পারেন না। এর পেছনে দুটি প্রধান ফিমেইল সেক্স হরমোন- এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন এর প্রভাব কাজ করে৷ এস্ট্রোজেন মাসিক চক্রের ধাপগুলো নিয়ন্ত্রণ করে ও প্রোজেস্টেরন গর্ভধারণে ভূমিকা রাখে। সাইকেল এর শুরুতে বা ফলিক্যুলার পর্যায়ে যখন ওভারি থেকে ডিম্বাণু রিলিজ এর জন্য প্রস্তুত হয় তখন এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন দুইটির লেভেলই বাড়তে থাকে এবং মেয়েরা এই সময়ে ঘুম ঘুম ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন বোধ করে। ওভুলেশানের পর শরীরকে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করতে প্রোজেস্টেরন এর লেভেল অনেক বেশি বেড়ে যায়। এই প্রোজেস্টেরনই আমাদের মস্তিষ্কে গামা এমাইনো বিউটাইরিক এসিড (GABA) নামে একটি কম্পাউন্ডের প্রোডাকশন বাড়িয়ে দেয় যেটি প্রাকৃতিক সেডাটিভ হিসেবে কাজ করে আমাদের ভালো ঘুমে সহায়তা করে ও শরীরকে রিল্যাক্স করে।

মহিলাদের সৌন্দর্য দ্রুত নষ্ট হওয়ার কারণ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স

কিন্ত কনসিভ না করলে অর্থাৎ লুটিয়াল পর্যায়ে প্রোজেস্টেরন লেভেল হঠাৎ করে ড্রপ করে ও পিরিয়ড শুরু হয়ে যায় এবং এই সময়টায় আবার ঘুমের সমস্যা শুরু হয়। 

আর যদি চক্রের সময় কেউ কনসিভ করে ফেলেন তখন এই দুটি হরমোন কমে না গিয়ে বরং অনেক বেশি বেড়ে যায় যাতে জরায়ুর মাসেল গুলো শিথিল হয়ে ফিটাস এর নিরাপদ ভাবে বেড়ে উঠা সম্ভব হয়। এই কারনেই মহিলারা প্রেগন্যান্সির প্রথম ১২ সপ্তাহে অনেক বেশি তন্দ্রাচ্ছন্ন বোধ করেন ও ঘন ঘন ঘুমান। এরপর লাস্ট ট্রাইমেস্টার আসতে আসতে এই হরমোনগুলো স্থিতিশীল হয়ে আসে তবে গর্ভাবস্থার শেষের দিকের উপসর্গগুলোর কারনে তখন কারো কারো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে থাকে।

মেয়েদের রিপ্রোডাক্টিভ সাইকেল এর শেষ ধাপ মেনোপজের সময় এই দুটি হরমোনই মারাত্মকভাবে কমে যায় যার জন্য হট ফ্ল্যাশ, রাতে প্রচন্ড ঘাম হওয়া বিধায় ঘুমের সমস্যা, প্রচন্ড মুড সুইং, ইরিটেবিলিটি, এংজাইটি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয় ও সময়ের সাথে বাড়তে থাকে। 

মেনোপজের সময় মহিলারা অনেক বেশি স্ট্রেসড ফিল করেন যার জন্যেও ঘুমের মান খারাপ হয়ে যায়। 

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, জীবনের এই নির্দিষ্ট ধাপ গুলো ছাড়াও হরমোনাল ইম্ব্যালেন্স যেমন পিসিওএস আছে এমন মেয়েরাও স্লিপ ডিসওর্ডার ডেভেলপ করার ঝুঁকিতে থাকে কারন এই কন্ডিশনে মেয়েদের প্রোজেস্টেরন লেভেল লো থাকে এবং টেস্টোস্টেরন বেশি থাকে। 

ভালো ঘুমের জন্য এই ফিমেইল হরমোনের পাশাপাশি অন্যান্য হরমোনের ভারসাম্যও জরুরি। যেমন কর্টিসল ও মেলাটোনিন এর ভারসাম্য আমাদের সঠিক সময়ে ঘুম ও কোয়ালিটি স্লিপের জন্য দায়ী। এছাড়া থাইরয়েড ডিসফাংশান - হাইপার ও হাইপোথাইরয়েডিজম থাকলেও রাতে ঘুম না হওয়া এবং দিনে অতিরিক্ত ক্লান্তি বা ফ্যাটিগ ফিল করার সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। 

এখন বয়সের সাথে সাথেতো এস্ট্রোজেন- প্রোজেস্টেরন লেভেল কমবেই। তাহলে ঘুমের সমস্যা এড়াতে করনীয় কি?

- নিয়মিত ব্যায়াম করা, প্রোপার স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট, ক্যাফেইন ইনটেইক কমানো, ঘুমের নির্দিষ্ট রুটিন ফলো করা মানে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো ও সকালে একই সময়ে ঘুম থেকে উঠা, ঘুমের মিনিমাম ২-৩ ঘন্টা আগে স্ক্রিন টাইম কমিয়ে ফেলা বা বন্ধ করা, ঘুমের আগে মেডিটেশান বা ব্রিদিং এক্সারসাইজ করা, ডায়েটে ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখা ইত্যাদি।

নিউট্রিশনিস্ট মো: সজল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম