বাচ্চা খেতে চায় না? জেনে নিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

 

বাচ্চা খেতে চায় না? জেনে নিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

বাচ্চা কোন ভাবেই খেতে চাচ্ছে না। বাচ্চাকে খাওয়াতে সারাবাড়ি দৌড়াতে হচ্ছে। কোন ভাবেই যেন মুখের খাবার গিলছে না। খাবার দেখলেই তার অনেক অনীহা। ভাত দেখলে যেন দৌড়ে পালায়। কিন্তু চিপস, চানাচুর খুব খায়৷ এই অভিযোগ যদি আপনার বাবুকে নিয়ে আপনার হয়ে থাকে তাহলে আজকের পোস্ট টা আপনার জন্য। 

বাচ্চাদের বাইরের খাবার দেয়া শুরু হয় সাধারণত ৬ মাস বয়স থেকে। ৬মাস থেকে ১ বছর বাচ্চা মোটামুটি ভালো খেলেও যখন থেকে হাটা শুরু করে এরপর থেকেই শুরু হয়ে যায় বাচ্চাদের না খাওয়ার সমস্যা। এই সমস্যা থেকে আসলে উত্তরনের কি উপায়? 

১) প্রথমেই আপনাকে একটা জিনিস বুঝতে হবে যে বাচ্চাদের খাবার আর বড়দের খাবারের পরিমান কিন্তু এক না। আপনার পাকস্থলীর ধারন ক্ষমতা অনেক বেশি সেই অনুযায়ী বাচ্চাদের অনেক কম। অনেক মায়েরাই আছেন বাচ্চাদের ১ প্লেট ভাত নিয়ে বসবেন এবং সেটা না খেলেই তার বাচ্চা খায়না বা না খেলে বকা দেন বা গায়েও হাত তোলেন এটা করা খুবই খারাপ। এতে বাচ্চার খাবারের প্রতি অনিহা আসে এবং সে খাবার দেখলেই ভয়ে এবং আতংকে থাকে। 

বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে করণীয়। পাতলা পায়খানার সিরাপের নাম

২) বাচ্চাদের হাত দিয়ে খেতে দিন। সাধারণত ৬ মাসের পরেই বাচ্চারা হাত দিয়ে ধরা শিখে এবং মুখে দিতে পারে। তাই বাচ্চাদের হাত দিয়ে খাওয়া শিখান। খাবার তৈরি করে সামনে দিয়ে রাখুন। ও খেলতে খেলতে খাবে। বাচ্চারা অনুকরণ করতে খুবই পছন্দ করে। তাই আপনি খেতে বসলে কিভাবে খান বা কোন খাবার টা ওকে খাওয়াতে চাচ্ছেন সেটা খুব মজা করে খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে বাচ্চারা ওই খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হবে। 

৩) বাচ্চাদের দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।  এতে বাচ্চাদের হাড় মজবুত হবে। তবে হ্যা বাচ্চাদের ১৮ মাস পর্যন্ত গরুর দুধ না দেয়াই ভালো। অনেক সময় গরুর দুধে বাচ্চাদের এলার্জি ট্রীগার করে যার জন্য বাচ্চাদের ঘন ঘন ঠান্ডা লাগে। তাই এই বয়সে ছাগলের দুধ খাওয়ানো বাচ্চাদের জন্য সব থেকে ভাল অপশন। যদি দুধে বাচ্চার হজমে সমস্যা হয় তাহলে ডাক্তার বা নিউট্রিশনিষ্ট এর পরামর্শে বাচ্চাকে প্যাকেটজাত  দুধ খাওয়াতে পারেন। 

৩) বাচ্চার খাবার কালারফুল রাখার চেষ্টা করবেন। এতে খাবারের প্রতি বাচ্চাদের আকর্ষণ বাড়ে। খাবারে আগ্রহী হয়। 

৪) আমরা অনেকে বাচ্চাদের খাবার নিজেরা খেতে পারি না। টেস্ট লাগে না বলে। এটা মনে রাখবেন বাচ্চাদের টেস্ট সেনসেশন ৭/৮ মাস পর থেকেই বিল্ড আপ হতে শুরু করে। যেটা আপনার মুখে মজা লাগছে না সেটা আপনার বাচ্চা খাবে এই আশা করে লাভ নেই। 

৫) বাচ্চাকে প্রতিদিন অন্তত ১ টা করে ডিম খাওয়ান। অনেক সময়ই বাচ্চারা খালি ডিম খেতে চায়না। এক্ষেত্রে সুজি,খিচুড়ি বা অন্য খাবারের সাথে ডিমটা মিক্স করে দিতে পারেন। বা ডিমের হালুয়া বানিয়ে দিতে পারেন। 

৬) বাচ্চাদের খাবার রান্নায় ঘী যোগ করুন। প্রতিটি ২/৩ টেবিল চামচ ঘি আপনার বাচ্চার দৈহিক এবং মানসিক বিকাশে অনেক বেশি ভুমিকা রাখবে। 

শিশুদের শারীরিক গঠনে প্রোটিনের ভূমিকা। প্রোটিন কিভাবে দেবেন?

৭) আমাদের দেশের সব থেকে কমন প্রাকটিস এখন ছোট বাচ্চাদের Instant নুডুলস খাওয়ানো। আপনি জানেনই না যে আপনি এই নুডুলস খাইয়ে নিজের অজান্তেই আপনার বাচ্চার কতবড় ক্ষতি করে ফেলছেন। ইন্সট্যান্ট নুডুলসে থাকা মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট আপনার বাচ্চার ইমিউনিটি দূর্বল করে,এছাড়াও ভবিষ্যতে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারের মত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ইন্সট্যান্ট নুডুলস এর পরিবর্তে বাচ্চাকে হোমমেইড নুডুলস বা বাকহুইট নুডুলস খাওয়াতে পারেন। 

৮) বাচ্চাদের সাদা চিনি খাওয়া থেকে বিরত রাখুন। চেষ্টা করুন খাটি আখের গুড় খাওয়াতে। 

৯) অনেক বাবা মায়ের ধারনা ভাত খাচ্ছেনা মানেই বাচ্চা কিছুই খাচ্ছে না। ভাত কার্বোহাইড্রেট ছাড়া খুব বেশি এমাউন্টের কোন ভিটামিন মিনারেলস দেয়না। তাই অযথা দুশ্চিন্তা করবেন না। 

১০) বাচ্চাকে তৈলাক্ত মাছ দিন। ছোট মাছ খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।  গরু,খাসির কলিজা খাওয়ান। ইদানীং যেহেতু মুরগিকে প্রচুর ফিড খাওয়ানো হয় তাই মুরগির কলিজা এভয়েড করাই ভালো। তবে অনেক সময় বাচ্চারা কলিজা খেতে চায়না। সেক্ষেত্রে কলিজা বেটে খিচুড়ি তে মিক্স করে খাওয়াতে পারেন। 

১১) বাইরের খাবার থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখুন। বিশেষ করে চিপস। এতে বাচ্চার ক্ষুধা কমে যায় এবং ব্রেইনের বৃদ্ধি হ্রাস পায়। চেষ্টা করুন যে কোন খাবার বাসায় বানিয়ে দিতে। 

১২) সময়ের স্বল্পতার জন্য অনেক মায়েরাই বাচ্চার হাতে মোবাইল দিয়ে বাচ্চাদের খাইয়ে থাকেন। এর থেকে ভয়ংকর অভ্যাস হতে পারে না। বাচ্চার সাথে খেলা করুন।ওকে বই দিন। খেলার ছলে ওকে খাওয়া শিখান। 

১৩) বাচ্চাদের খুব কমন একটা সমস্যা তারা এক খাবার রোজ রোজ খেতে চায়না৷ তাই চেষ্টা করুন খাবারে ভ্যারিয়েশন আনার৷ এতে বাচ্চার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। 

মনে রাখবেন আপনি আপনার বাচ্চার যে খাবারের অভ্যাস এখন গড়ে তুলবেন সেটার উপর তার ফিউচার নির্ভর করছে। উপরের কাজগুলো করলে আশাকরছি আপনার বাচ্চার খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। 

সুমাইয়া শিলা 

নিউট্রিশনিষ্ট

চাইল্ড এন্ড রিপ্রোডাক্টিভ নিউট্রিশন কনসালট্যান্ট 

বিএস, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট, 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম