কালচে ঠোঁট গোলাপি করার উপায়
ঠোঁট দেহের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অঙ্গ। তুলতুলে নরম এবং গোলাপী ঠোঁট কে না চায়? কিন্তু এই গোলাপি ঠোঁট যত্নের অভাবে কালচে এবং বিভিন্ন কারণে শুষ্ক ও মলিন হতে পারে । কিন্তু কেন কালচে ঠোঁট দেখা দেয়? কালচে ঠোঁট গোলাপি করার প্রাকৃতিক উপায় কী কী? সব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন এই আর্টিকেলে। এই উপায়গুলো মেনে চললে আপনার ঠোঁটের কালচে ভাব তো কমবেই, সাথে ঠোঁট হয়ে উঠবে আকর্ষণীয় গোলাপি।
কালচে ঠোঁট হওয়ার কারণ
ভিটামিনের অভাব
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শরীরে ভিটামিন বি ১২-এর অভাব হলে ঠোঁটের কোণে কালচে ছোপছোপ দাগ দেখা যায়।
শরীরে পানির ঘাটতি
শরীরে পানির ঘাটতির কারণেও যে ঠোঁট কালচে হয়ে যায় তা হয়তো অনেকে জানেন না। ঠোঁট হঠাৎ কালচে হয়ে যাচ্ছে, শুষ্ক ও ফেটে যাচ্ছে তাহলে বুঝবেন পানির অভাব আপনার শরীরে।
থাইরয়েড এর লক্ষণ
অনেক সময় শরীরে থাইরক্সিন হরমোনের নিঃসরণ কমে গেলে অথবা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ছাড়াও ঠোঁটে কালচে দাগ ফুটে ওঠে।
শরীরে অতিরিক্ত আয়রন
অত্যধিক আয়রন গ্রহণের ফলে ত্বকের রং পরিবর্তন হতে পারে।
অনেক ব্যক্তি আছে যারা সব সময় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খান আবার অনেক বেশি আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেন , এতে শরীরে আয়রনের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যায় । অতিরিক্ত আয়রন গ্রহণের ফলে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে, কিডনির সমস্যা হতে পারে, সাথে শরীরের রং পরিবর্তন ছাড়াও ঠোঁটের রং পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।
মেডিসিনের প্রভাব
বিভিন্ন কেমিক্যালের ওষুধের কারণে ত্বকের রং পরিবর্তন এবং ঠোঁটে কালো দাগ তৈরি হতে পারে।
নিম্নলিখিত কেমিক্যালের ওষুধগুলো হতে পারে ঠোঁট কালচে হওয়ার কারণ :
• ক্যান্সার চিকিৎসার সময় ব্যবহৃত সাইটোটক্সিক ওষুধ।
• অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ, যেমন ক্লোরপ্রোমাজিন।
• ম্যালেরিয়ারোধী ওষুধ, যেমন কুইনাইন সালফেট।
• অ্যান্টিকনভালসেন্টস, যেমন ফেনাইটোইন।
• অ্যামিওডারোনের মতো অ্যান্টিঅ্যারিথমিক ওষুধ।
যদি কেউ এই ওষুধগুলো গ্রহণ করার পরে তাদের ঠোঁটে কালো দাগের ছাপ তৈরি হয় তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। তখন ডাক্তার ওষুধ পরিবর্তন করে বা অন্য বিকল্প চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারবেন।
হাইপারপিগমেন্টেশন
মেলাজমা স্কিনের কমন সমস্যা। মেলাজমা তখন দেখা দেয় যখন ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ আর বিবর্ণ হয়ে যায়। এটি যখন ঠোঁট সহ যে কোনও জায়গায় ছড়িয়ে পরে সেটাকে বলে হাইপারপিগমেন্টেশন। তাছাড়া গর্ভবতী মহিলারা এতে প্রায়শই আক্রান্ত হন। প্রেগনেন্সির পরে এই পিগমেন্টেশন কমেও যায় যখন হরমোনের লেভেল স্বাভাবিক মাত্রায় আসে। তাছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ও হরমোনাল থেরাপির জন্য হাইপারপিগমেন্টেশন হতে পারে।
ঠোটের এরিয়াতে সানস্ক্রিন এপ্লাই না করা
অনেকেই ঠিক মতো সানস্ক্রিন ঠোঁটের চারপাশের এরিয়াতে ঠিক মতো ব্যবহার করেন না। যার কারণে ঠোঁটের চারপাশ এবং ঠোঁটে কালো দাগ পড়ে যায়। দিনে অন্তত ২/৩ বার সানস্ক্রিন ব্যবহার না করার কারণে ঠোঁটে এবং ঠোঁটের চারপাশে হাইপারপিগমেন্টেশন দেখা দেয়।
অ্যালার্জি
ঠোঁটে কালো দাগের জন্য অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দায়ী হতে পারে। এই অ্যালার্জিকে পিগমেন্টেড কন্টাক্ট চেইলাইটিস বলা হয়।
যেসব কাজ অ্যালার্জির কারণ :
• মেয়াদ উত্তীর্ণ লিপস্টিক ও লিপবাম ব্যবহার করলে।
• মুখের মেকআপ।
• টুথপেস্ট।
• হেয়ার ডাই বা চুল কালার করার ক্রিম।
• গ্রিন টি, যা স্পর্শকাতর ত্বকে জ্বালাতন করতে পারে।
উপরোক্ত প্রোডাক্ট গুলোর মধ্যে যদি কোনো প্রোডাক্ট ব্যবহারের ফলে চুলকানি অথবা জ্বালাতন করে তাহলে সাথে সাথে তা ব্যবহার করা বন্ধ করে দিতে হবে। এবং ডাক্তার এর শরণাপন্ন হতে হবে।
ক্যান্সার
মেলানোমা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে ঠোট কালচে হয়ে যাওয়া এবং রক্তবর্ণ হওয়া। এই দাগ ধীরে ধীরে গাঢ় হতে থাকে আর রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি এরকম কোনো লক্ষণ পান তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
তাছাড়া আরও বিভিন্ন কারণে ঠোটের রং কালচে হয়। যেমন : বাতাসের আর্দ্রতা, মানসিক চাপে থাকলে, ধূমপান করলে, কেমোথেরাপি, নিম্নমানের প্রসাধনী ব্যবহার, কর্মব্যস্ত জীবনের কারনে ইত্যাদি।
তাছাড়া এইতো সামনে শীতকাল চলে আসছে। এই সময়ে সঠিক যত্ন না নিলে ঠোঁটের অবস্থা আরও বেশি খারাপ হয়ে যাবে ।
তাই কালচে এবং শুষ্ক ঠোঁটকে কীভাবে আকর্ষণীয় এবং কোমল করা যায় তা জেনে নিন।
কালচে ঠোঁট গোলাপি করার প্রাকৃতিক উপায়
আপনার ঘরের জিনিস ব্যবহার করে আপনার ঠোঁটের যত্ন নিতে পারবেন। যে কাজগুলো করলে আপনার শুষ্ক ও কালচে ঠোঁট ঝকঝকে হয়ে উঠবে তা নিম্নরূপ:
১) হাফ চামচ খাঁটি মধু, এক চামচ চিনি একসাথে মেশাবেন। মিশ্রণটি ঠোঁটে আলতো করে ঘষবেন। এটা ন্যাচারাল লিপক্রাব হিসেবে কাজ করবে।
কিছুক্ষণ ঠোঁটে ঘষার পর টিসু দিয়ে মুছে অল্প একটু লেবুর রস ঠোঁটে অন্তত পাঁচ মিনিটের জন্য রেখে দিন।
এরপরে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে আপনার পছন্দের যেকোনো লিপবাম লাগাতে পারেন।
২) এক চা চামচ ঘি এবং হাফ চা চামচ হলুদের গুড়া মিশ্রণ করুন। মিশ্রণটি ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ঠোঁটে লাগাতে পারেন, অথবা রাতের বেলা ঠোঁটে লাগিয়ে সকাল বেলা ধুয়ে ফেলতে পারেন।
এক সপ্তাহ রেফ্রিজারেটরে রেখেও এই মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারবেন।
৩) এক চা চামচ চিনি, হাফ চামচ মধু, হাফ চামচ দারুচিনি গুড়া একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করুন। মিশ্রণটি ঠোঁটে আলতো করে কিছুক্ষণ ঘষুন। আর টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলুন।
তারপর হাফ চা চামচ হলুদ গুড়া, হাফ চামুচের চেয়ে একটু বেশি বেশনের গুড়া, হাফ চামচ দুধ, অল্প একটু আমন্ড অয়েল এড করুন। মিশ্রণটি একসাথে পেস্ট করে ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন পাঁচ মিনিটের মত, আর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
তারপর নিজের পছন্দমত লিপবাম বা ময়েশ্চারাইজার লাগাতে পারেন।
৪) এক চা চামচ মধু আর হাফ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ঠোটে প্রতিদিন লাগাবেন । তাতে ঠোঁটের মরা চামড়া দূর হবে আর কালচে ভাব কমে যাবে।
৫) শসার রস ঠোঁটকে গোলাপি করতে পারে। ৫ মিনিটের মতো শসার রস দিয়ে ঠোঁট ম্যাসাজ করুন এবং ফলাফল নিজেই বুঝতে পারবেন।
৬) আমন্ড অয়েলের (বাদাম তেল) সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এই প্যাকটি প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঠোঁটে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করতে পারেন।
৭) একটা লেবুর অর্ধেক কেটে তার ওপর দুই ফোঁটা মধু দিয়ে ম্যাসাজ করুন ঠোঁটে। এরপর বরফ দিয়ে ঠোঁট ধুয়ে ফেলুন।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা :
• ব্রাশ দিয়ে কখনো ঠোঁট ঘষবেন না, তাতে ঠোটের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
• যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন, বাহির থেকে এসে লিপস্টিক মুছতে ভুলবেন না।
• নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি উদাসীনতা দেখাবেন না।
• রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই অবশ্যই ঠোঁটের মেকআপ তুলে ফেলতে হবে। ঠোঁটের মেকআপ তুলতে খানিকটা আমন্ড অয়েল অথবা অলিভ অয়েল দিয়ে মুছে ফেলুন।
• বেশি বেশি পানি পান করুন।
• মদ্যপান ধুমপান এড়িয়ে চলুন।
• জিহবা দিয়ে ঠোঁট বারবার ভেজানো পরিহার করুন, যখনই মনে করবেন আপনার ঠোঁট শুকিয়ে গেছে, তখনই লিপবাম ব্যবহার করবেন ।
উপরোক্ত নিয়মগুলো যদি মেনে চলেন। তাহলে আপনি আপনার কাঙ্খিত ফলাফল নিজেই দেখতে পারবেন।
শেষকথা,
ঠোঁট চেহারার সৌন্দর্য ধরে রাখে। তাই ঠোঁটের সৌন্দর্য ধরে রাখা সকলেরই উচিত। উপরিউক্ত উপায়গুলো প্রয়োগ করে আপনার কালচে ঠোঁট করে তুলুন স্বচ্ছ গোলাপি।