হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি, কাদের ক্ষেত্রে কেমন ঝুকি
প্রেগন্যান্সি প্রত্যেক নারীর জীবনে অতি কাংখিত বিষয়। প্রেগন্যান্সি যেমন নারীর জীবনে সুখকর তেমনি সবচেয়ে কঠিনতম সময়।
প্রত্যেক নারীরকেই প্রেগ্ন্যাসিতে নানান রকম জটিলতার শিকার হতে হয়। এর মধ্যে কিছু জটিলতা হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সির সূচনা করে।
আমরা এই পোস্টে আলোচনা করবো, হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে কোন কোন রোগে আক্রান্ত মায়েরা কি ধরনের বিপদের ঝুকিতে থাকেন সেটা।
১৬ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিঃ
১৬ বছরের কম বয়সী কিশোরীদের ১৬ বছরের বেশি বয়সীদের তুলনায় গর্ভাবস্থার সাথে সম্পর্কিত জটিলতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি থাকে। যেমনঃ
অকাল প্রসব
কম ওজনের শিশু জন্মগ্রহণ
উচ্চরক্তচাপ দেখা দেয়া
রক্তশূন্যতা
অল্প বয়সে গর্ভধারণ করলে ঝুঁকির কারণঃ
-১৬ বছরের কম বয়সে পেলভিসের গঠন
পরিপূর্ণ হয় না। এই বয়স কিশোরীদের বাড়ন্ত বয়স। বিশেষ করে প্রজনন অঙ্গের গঠনের বয়স। যেহেতু এই বয়সে পেলভিসের গঠন প্রক্রিয়া চলমান থাকে।
এই অবস্থায় যদি কেউ গর্ভধারণ করে তাহলে সন্তান প্রসবের সময় নানান জটিলতা দেখা দেয়।
-বাড়ন্ত বয়সে যেখানে কিশোরীর শরীরে পুষ্টির চাহিদা বেশি থাকে। বিভিন্ন কারণে এই বয়সে অনেক সময় কিশোরী অপুষ্টিতে ভুগে। নিজের শরীরের পুষ্টি চাহিদা নিয়েই এই বয়সে কিশোরীদের ধারণা থাকে না। এই অবস্থায় গর্ভধারণ
করলে শিশু অপুষ্টির শিকার হওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।
পুষ্টির ঘাটতি অনেক সময় শরীরে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে যা মা এবং শিশু উভয়ের জন্য আরও জটিলতা সৃষ্টি করে।
-গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া অকাল প্রসবের কারণ হতে পারে। এর ফলে কম ওজনের বাচ্চা জন্ম নিতে পারে যাদের বেঁচে থাকার জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়।
৩৫ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিঃ
বয়স বাড়ার সাথে সাথে নারী দেহে হরমোনাল নানান রকম পরিবর্তন ঘটতে থাকে।
গর্ভধারণের সম্ভাবনা হ্রাস পেতে শুরু করে।
গর্ভধারণ করলে ও নানান রকম ঝুঁকি বহন করতে হয়। যেমনঃ
-বয়স্ক নারীদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা কার্ডিওভাসকুলার রোগের সম্ভাবনা বেশি থাকে যা গর্ভাবস্থাকে জটিল করতে পারে।
ফলাফলঃ গর্ভপাত, ভ্রূণের বৃদ্ধি ব্যহত হওয়া এবং জন্মগত ত্রুটি।
-৩৫ বছরের বেশি বয়সী একজন মহিলার ক্রোমোসোমাল সমস্যার কারণে জন্মগত ত্রুটিযুক্ত সন্তান হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
ডাউন সিনড্রোম হল ক্রোমোজোমের সাথে সম্পর্কিত সবচেয়ে কমন জন্মগত ত্রুটি। যা বিভিন্ন মাত্রার বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা এবং শারীরিক অস্বাভাবিকতার সৃষ্টি করে। প্রসবপূর্ব স্ক্রীনিং পরীক্ষা ক্রোমোসোমাল জটিলতার সম্ভাবনা নির্ধারণে সাহায্য করতে পারে।
-হরমোনাল ইম্ব্যালেন্স এই বয়সে খুবই পরিচিত ঘটনা।
ফলে মিসক্যারেজের ঝুঁকি বেশি থাকে।
মেয়েদের মাথাব্যথা বা মাইগ্রেন? জেনে নিন সমাধান
-৩৫ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের সাধারণত বয়স নির্বিশেষে গর্ভাবস্থার সাথে সম্পর্কিত জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, যার মধ্যে রয়েছেঃ
গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া।
একাধিক গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি হওয়া (যমজ বা তিন সন্তান), কম ওজনের সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
সিজারিয়ান ডেলিভারি প্রয়োজন হয়।
কম ওজন কিংবা অতিরিক্ত ওজনে ঝুঁকি
অতিরিক্ত ওজন বা কম ওজন গর্ভাবস্থার জটিলতার কারণ হতে পারে।
অতিরিক্ত ওজনঃ
স্থূলকায় নারীদের শিশুর জন্মগত ত্রুটি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
কম ওজনঃ
যাদের ওজন 100 পাউন্ডের কম তাদের অকাল প্রসব বা কম ওজনের শিশুর জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং মায়ের রক্তশূন্যতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিঃ
জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বিশেষ এক ধরনের ডায়াবেটিস, যা কেবল প্রেগন্যান্সিতেই হয়ে থাকে।
সন্তান প্রসবের পর তা স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে। যদিও অনেক সময় জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস থেকে পরবর্তীতে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের মা এবং শিশু উভয়ের উপরই এর প্রভাব পড়ে।
জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসের লক্ষণঃ
ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ পাওয়া, ঘনঘন গলা শুকিয়ে যাওয়া, তৃষ্ণা পাওয়া, ক্লান্ত লাগা,ইউরিন ইনফেকশন হওয়া।
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস শিশুর জন্মগত ত্রুটির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। শিশুর জন্মের পর গ্লুকোজের পরিমান কমে যেতে পারে, শিশুর জন্ডিস হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপে ঝুঁকিঃ
দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপ সহ গর্ভবতী মহিলারা গর্ভাবস্থায় কম ওজনের শিশু, প্রিটার্ম ডেলিভারি, কিডনি সমস্যা এবং প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুঁকি হতে পারে।
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে ঝুঁকিঃ
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) হল একটি হরমোনাল ইম্ব্যালেন্স জনিত সমস্যা। পিসিওসে আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত, অকাল প্রসব, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এবং প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
অটোইমিউন রোগে ঝুঁকিঃ
অটোইমিউন রোগের উদাহরণের মধ্যে রয়েছে হাশিমোটোস, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (এমএস) এবং লুপাস।
অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত নারীরা অকাল প্রসব বা মৃত প্রসবের ঝুঁকিতে থাকেন। অটোইমিউন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত মেডিসিন ভ্রূণের বিকাশে বাধা দেয়।
থাইরয়েড রোগে ঝুঁকিঃ
হাইপারথাইরয়েডিজম (ওভারঅ্যাকটিভ থাইরয়েড) বা হাইপোথাইরয়েডিজম (আন্ডারঅ্যাক্টিভ থাইরয়েড) উভয় অবস্থা প্রেগন্যান্সিতে মা এবং শিশুর জন্য বিপদ।
থাইরয়েডের সমস্যায় মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল এছাড়াও ভ্রূণের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, শিশুর গলগন্ড হতে পারে, শিশুর নিউনেটাল হাইপোথাইরয়েডিজম হতে পারে শিশুর জন্মগত ত্রুটি হতে পারে।
মায়ের গর্ভ থেকেই শিশুর প্রথম বিকাশ শুরু হয়। সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান জন্ম দিতে মায়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা অত্যাবশকীয়। তাই প্রেগন্যান্সির পূর্ব থেকেই খাদ্যাভ্যাস, ওজন নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। যাতে হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সির জটিলতার শিকার হতে না হয়।
নিউট্রিশনিস্ট সজল।