চিনি বেশি খেলে কি হয়?
আজকে বিশ্বব্যাপী ডায়বেটিস, ওবিসিটি, হার্ট ডিজিজ এবং ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে খাবারে মাত্রাতিরিক্ত চিনির ব্যবহার। এই চিনি আমরা ব্যবহার করছি কখনো জেনে, কখনো বা না জেনে।
আমাদের উপমহাদেশে আসলে এত ব্যাপকভাবে চিনির ব্যবহার ছিল না। বিভিন্ন মিষ্টান্নের ব্যাপারে এই অঞ্চল বিখ্যাত হলেও সেগুলি খাওয়া হত কালে ভদ্রে, চিনি আসলে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোন পন্য ছিল না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের তালিকায় চিনির নামটা আসে মূলত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা একটু ভাল হবার পরে, নব্বই দশকে।
আর এর পেছনে ব্যাপকভাবে কাজ করেছে আমেরিকানদের অনুকরন।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে পশ্চিমা বিশ্বে খাদ্য বা রন্ধন সম্পর্কিত একটি বিপ্লব দেখা দেয় যার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল আমেরিকা। এই রূপান্তর বা বিপ্লব আসলে শুধু খাদ্য সম্পর্কিত ছিল না; বরং এটি ছিল চিনি শিল্পের প্রভাবে বদলে যাওয়া খাদ্য ও স্বাস্থ্যনীতির মাধ্যমে বিপুল জনগোষ্ঠীকে বোকা বানিয়ে অর্থ আয়ের এক মহাপরিকল্পনার অংশ।
মিডিয়ার ব্যাপক প্রচারনার ফলে খাবারের সাথে এবং রান্নার রেসিপিতে চিনির অনুপ্রবেশ শুরু হয়েছিল এবং ১৯১৪ সাল নাগাদ চিনি বিশ্বব্যাপী খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আখের ক্ষেত থেকে আমাদের ডাইনিং টেবিলের দিকে চিনির এই যাত্রা মূলত প্রভাব রাখতে শুরু করে এককালে ব্রিটিশ, ফ্রেঞ্চ ও ডাচদের এবং পরে আমেরিকার অর্থনৈতিক উত্থানের মূলে।
‘সুগার ট্রাস্ট ‘ নামে পরিচিত আমেরিকার একটি বিখ্যাত সুগার কোম্পানি আরো একধাপ এগিয়ে চিনিকে একটি ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যায়। কফিতে চিনি মেশানো, নানা উপলক্ষ্যে কেক কেটে সেলিব্রেট করা যার উপরের ডেকোরেট করা আবরণটির মূল উপাদান কেবলই চিনি এবং ক্রমবর্ধমান ক্যান্ডি শিল্পের উদ্ভাবন তখন চিনিকে করে তুলে জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ।
এরপর চিনি শিল্পে আসে আরও আধুনিকতার ছোঁয়া । চিনি তখন টিনজাত এবং প্যাকেটজাত খাবারের পথ খুঁজে পায় এবং সারা বিশ্বে এর প্রচার বা বিজ্ঞাপন এমনভাবে করা হয় যা আমাদেরকে বুঝায় চিনি স্বাস্থ্য এবং লাইফ স্টাইল উভয় ক্ষেত্রেই কল্যাণকর এবং জীবনকে সহজ করতে খাবারকে সংরক্ষণ করতে চিনির বিকল্প নেই। এই প্যাকেটজাত ‘ইজি টু মেইক ফুড‘ এবং ক্যান্ড ফুড দ্রুতই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে যার মধ্যে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চিনির উপস্থিতি থাকতো।
অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার কুফলের বিরুদ্ধে এমনকি এখন পর্যন্ত আমেরিকান ডায়েটারি গাইডলাইনে যথেষ্ট আলোকপাত করা হয় নি। অথচ এই মুহুর্তে আমেরিকার মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৬৮% এর বেশি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট, আজ হোক কাল হোক তাদের ডায়বেটিস হবে যদি না তারা তাদের অভ্যাস পরিবর্তন করে।
খাবারে চিনির ব্যবহার আমাদের অভ্যাসকে এমনভাবে প্রভাবিত করেছে যে আজ বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখতে ইনসুলিন নিচ্ছেন কিন্তু চিনি খাওয়া বন্ধ করতে পারছেন না।
পরিবারকে যদি রোগের গোডাউন বানাতে না চান, তবে চিনি খাওয়ার পরিমান সীমিত করে আনুন।