ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয় ও চিকিৎসা

 

ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয় ও চিকিৎসা

২০২৩ সালে বাংলাদেশে ভয়াবহতা ছড়িয়ে দিয়েছে ডেঙ্গু জ্বর। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেয়েছে। মরণঘাতী এই ডেঙ্গুর হাত থেকে কীভাবে রেহাই পাওয়া যায় সে বিষয়ে বেশিরভাগ মানুষই জানেন না। সবাইকে জানানোর জন্য এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে ভাইরাসঘটিত এই জ্বর বিষয়ে, ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয় কী ও সতর্কতা ও রোগীর চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নিতে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

ডেঙ্গু জ্বর 

এটি একটি ভাইরাসঘটিত জ্বর। এডিস ইজিপ্টি নামক মশার কামড়ে দেহে ডেঙ্গুর জীবাণু প্রবেশ করে। মূলত এই মশার স্ত্রী প্রজাতি ডেঙ্গুর সৃষ্টি করে। 

ডেঙ্গুর প্রধান উপসর্গ হচ্ছে জ্বর। যা সাধারণ ভাইরাল জ্বর, সর্দি-কাশি হওয়ার জ্বরের মতোই লক্ষ্যণ দিয়ে শুরু হয়। কিন্তু ডেঙ্গু জ্বরের স্থায়িত্ব ও অন্যান্য কিছু উপসর্গ দেখে সাধারণ ভাইরাল জ্বর থেকে এই জ্বর শনাক্ত করা যায়। 

ডেঙ্গু ও সাধারণ জ্বরকে আলাদাভাবে চেনার জন্য কয়েকটি লক্ষ্যণ রয়েছে যা কিছুক্ষণের মধ্যেই জানতে পারবেন।

ডেঙ্গু জ্বর -এর লক্ষ্যণ 

নিম্নোক্ত লক্ষ্যণগুলো খেয়াল করলেই সাধারণ জ্বর ও ডেঙ্গুর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারা যাবে।

ডেঙ্গুর উল্লেখযোগ্য কিছু লক্ষ্যণ হলো-

- প্রচণ্ড জ্বর।

- জ্বরের সাথে মাথাব্যথা। 

- চেখের পেছনে ব্যথা।

- মাংসপেশিতে ব্যথা। বিশেষ করে হাড়ের জয়েন্টে অসহ্যকর ব্যথা হতে পারে। 

- ত্বকে লাল দাগযুক্ত ফুসকুড়ি।

- জ্বরের সাথে বমি ও পাতলা পায়খানাও থাকতে পারে। 

এই লক্ষ্যণগুলো কোনো ব্যক্তির দেহে ডেঙ্গু ভাইরাস প্রবেশের কয়েকদিনের মধ্যে দেখা দিতে শুরু করে।

ডেঙ্গুর ভয়াবহ লক্ষ্যণটি হচ্ছে নাক-মুখ দিয়ে রক্ত পড়া। তাই ঝুঁকি না নিয়ে উপরিউক্ত লক্ষ্যণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিন।

ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পদ্ধতি 

যেদিন দেহে ডেঙ্গুর জীবাণু প্রবেশ করে সেদিনই এর লক্ষ্যণ তেমন প্রকাশ পায় না। ২৪ ঘণ্টা পার হলেই প্রকাশ পেতে শুরু করে। কিন্তু আসলেই ডেঙ্গু কি-না তা একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করতে হয়। শনাক্ত করতে রোগীর দেহ থেকে এন্টিবডি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়, এন্টিবডিতে ডেঙ্গুর জীবাণু পাওয়া গেলে নিশ্চিত হওয়া যায় ডেঙ্গু হয়েছে কি-না।

 কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো জেনে নিন

ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগ বিধায় এর কোনো কার্যকর প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়নি। তাই এর প্রতিরোধ করা ছাড়া ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হবে না। 

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় 

যেহেতু ভাইরাসঘটিত এই জ্বরের এখনও কার্যকর কোনো টিকা তৈরি হয়নি, তাই এটা প্রতিরোধ করাটাই মূখ্য উপায় ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাওয়ার।

যে করণীয়গুলো মানতে হবে -

- এডিস মশা এই রোগের জন্য দায়ী। তাই এই মশার প্রকোপ রুখতে হবে। মশার আবাসস্থল ধ্বংস করতে হবে। 

- বাসাবাড়ির আশেপাশে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঝোপঝাড়, নর্দমা ড্রেন, বারান্দা ও ছাদের কোণা, টায়ার, ফুলের টব ইত্যাদি চিপা জায়গায় মশা আবাস তৈরি করে। এসব জায়গা সবসময় পরিস্কার রাখতে হবে।

- ঘরের আশেপাশে কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ, ভেজা জায়গা ও পানিতে মশা ডিম পাড়ে।

- মশার প্রজননক্ষেত্র, আবাসস্থল নির্মূলে ব্যক্তি, সমাজ, সামাজিক সংগঠন সবাইকে সচেতন হতে হবে। 

- রাতের বেলা ও অন্ধকারে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারী টানানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। অথবা কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হবে। দরজা, জানালা বন্ধ 

- সন্ধ্যা থেকে মশার আনাগোনা বেড়ে যায়। এই সময় সম্ভব হলে সারা শরীর আবৃত রাখে এমন জামাকাপড় পরিধান করতে হবে। 

এই করণীয়গুলো মেনে চললে নিজে এবং আশেপাশের মানুষদেরকেও ডেঙ্গু থেকে দূরে রাখা সম্ভব হবে। 

ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয় ও চিকিৎসা 

পরীক্ষা করে ডেঙ্গু শনাক্ত হলে ঘাবড়ে না গিয়ে সহজ কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা নিলেই রোগী সুস্থ হয়ে যায়। তবে রক্তের প্লেইটলেট/ প্লাটিলেট কমে গেলে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা নিতে হবে।

ঘরোয়া যেসব করণীয় মানতে হবে-

- রোগীরকে পানিশূন্যতা থেকে মুক্ত রাখতে হবে। বিভিন্ন তরল খাবার খাওয়াতে হবে রোগীকে। ডাবের পানি, স্যালাইন, দুধ, ফলমূল পানিশূন্যতা রোধ করে। বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। 

- রোগীকে বিশ্রাম নিতে হবে। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ঘরে থেকে বিশ্রাম করতে হবে।

- অবশ্যই নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে।

- সাধারণ জ্বর হলে যেমন প্যারাসিটামল খেলে আরাম পাওয়া যায়, ডেঙ্গু হলেও জ্বর কমাতে এই জাতীয় মেডিসিন নেওয়া যাবে। সাথে ব্যথা থাকলে ব্যথা কমাতেও প্যারাসিটামল নেওয়া যাবে। 

- রোগীর শরীর ভেজা কাপড় দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর মুছে দিলে ভালো। তাতে রোগী অনেকটা স্বস্তি পাবে।

সাধারণ বা ভাইরাল জ্বর হলে যেসব ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, ডেঙ্গু হলেও সেভাবেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে হবে।

ভাইরাসের সংক্রমণে হওয়া রোগের টিকা পাওয়া কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। ডেঙ্গুর এত বছরের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো টিকা, ওষুধ আবিস্কৃত হয়নি যা দিয়ে ডেঙ্গু পুরোপুরি প্রতিকার করা যাবে। প্রতিকারের সুযোগ না থাকায় প্রতিরোধ করাটাই একমাত্র উপায় ডেঙ্গু মুক্ত থাকার।

সতর্কতা 

সাধারণ জ্বরের মতোই আসে ডেঙ্গু। কিন্তু পরবর্তীতে হয়ে উঠতে পারে ভয়াবহ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে সেই রোগীর মধ্যে ডেঙ্গুর স্থায়িত্ব ও ভোগান্তি বেশি হয়ে থাকে। তাই ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর হেলাফেলা করে জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা যাবে না। ডেঙ্গু হলে নাক-মুখ দিয়ে রক্ত পড়া, শক সিনড্রোমের মতো জটিল অবস্থা দেখা দিলে রোগীকে হাসপাতালে রেখে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

মশার আবাসস্থল যেন বাসাবাড়িতে গড়ে উঠতে না পারে সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

শেষকথা, 

ডেঙ্গু জ্বর হলে ভয় না পেয়ে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নিতে হবে। ভুল পদ্ধতি প্রয়োগ না করে উপরিউক্ত সহজ করণীয়গুলো মেনে চললে ঘরোয়াভাবেই এই রোগ সারিয়ে তোলা যাবে। রোগীর অবস্থা বেশি জটিল হলে অবশ্যই ডাক্তারের সান্নিধ্যে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। 

প্রতিরোধ করাই একমাত্র পন্থা। তাই সবাই মিলে ডেঙ্গু প্রতিরোধের করণীয়গুলো মেনে চলা ও সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ডেঙ্গু থেকে দূরে থাকা যাবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম