মেয়েদের মধ্যে মাথাব্যথা, মাইগ্রেন, অল্পতেই হতাশ হয়ে যাওয়া, এক্সট্রিম ইমোশনাল সেন্সিটিভিটি, নিজের পছন্দের বিপরীত কিছু নিতে না পারা, অকারন রাগ এবং ভীষণ মুড সুইং, এই লক্ষনগুলো যাদের আছে তারা একটু নড়েচড়ে বসুন।
একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন আপনাদের অনেকেরই এই সমস্যাগুলোর পাশাপাশি আরো কিছু শারীরিক সমস্যাও আছে। চুলপড়া, অনিয়মিত পিরিয়ড, পিরিয়ডের আগে লম্বা সময় ধরে শরীর খারাপ লাগা, এই সমস্যাগুলো আপনাদের অনেকের মধ্যেই উপস্থিত।
এই সমস্ত সমস্যার একদম মূলে যে ব্যাপার, তা হল-প্রজেস্টেরনের অভাব। আপনাদের শরীর ঠিকভাবে প্রজেস্টেরন হরমোনটা তৈরি করছে না।
তো এগুলি আসলে চল্লিশ পয়তাল্লিশ বছরের আগে হওয়ার কথা না, কিন্তু আপনার যদি হয়ে থাকে, আপনার নিজেকে নিয়ে একটু কাজ করা উচিত, র্যাদার দ্যান ওভারথিংকিং।
প্রজেস্টেরন জিনিসটা কি??
প্রো-জেস্ট নামটা থেকেই বোঝা যায়, এটার কাজ হচ্ছে গর্ভধারনে সহায়তা করা। এই হরমোনের প্রভাবে মাসিক চক্রের মাঝামাঝি সময়ের দিকে আপনার ইউটেরাসের ভেতরকার দেয়াল মোটা হয়ে ওঠে যেন ডিম্বানুটা সেখান থেকে যথেষ্ট পুষ্টি পায়। পুষ্টি পেয়ে ডিম্বানুটা আরো বড় হয়ে উঠলে তা আরো প্রজেস্টেরন নিঃসরন করতে থাকে। তারপর, মাসের শেষের দিকে গিয়ে প্রজেস্টেরন কমতে শুরু করে, এবং তখন আপনার পিরিয়ড শুরু হয়ে যায়।
তো যাদের প্রজেস্টেরন কম, তাদের এই ডিম্বানুটা সেখানে ঠিকঠাক বসে না, ফলে ডিম্বানু পরিপক্ক হয়ে ওঠার সুযোগ পায় না। এর ফলে দেখা যায় মাসিক চক্রের দ্বিতীয়ার্ধেও প্রজেস্টেরন কম থাকছে এবং লম্বা সময় ধরে মুড এবং ফিটনেসের বারোটা বেজে থাকছে।
এখন কয়েকটা নিউট্রিয়েন্টের কথা বলি, যেগুলোর অভাবে আপনার প্রজেস্টেরন লো থাকছে।
বর্তমানে যত আর্লি মিসক্যারেজের ঘটনা ঘটছে তার জন্য দায়ী মূলত ৪টা সমস্যা, এর মধ্যে ১ নম্বর হল লো প্রজেস্টেরন।
লো প্রজেস্টেরনের কারনগুলো হলঃ
১)জিংক ডেফিসিয়েন্সি-খেয়াল করবেন, লো প্রজেস্টেরন প্যাশেন্টদের অনেকেরই মেমোরির অবস্থা খারাপ থাকে, এটা এর সাথে কানেক্টেড
২)ম্যাগনেসিয়াম ডেফিসিয়েন্সি-জিংকের মত ম্যাগনেসিয়ামেও একই কথা, এর সাথে দেখবেন এংজাইটি, প্যানিক ডিজর্ডার এবং ব্রেইন ফগও আছে।
ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যাত্বের কারণ ও প্রতিকার
৩)সাব ক্লিনিক্যাল ভিটামিন সি ডেফিসিয়েন্সি-স্কিনে হাত দিলেই একজন ভাল ক্লিনিশিয়ান বলে দিতে পারবেন আপনার প্রজেস্টেরন লো হওয়ার সাথে ভিটামিন সি'র অভাবের সম্পর্ক আছে কি না।
৪)হাইপারইনসুলিনেমিয়া-রক্তে লম্বা সময় ধরে বাড়তি ইনসুলিনের উপস্থিতি আমাদেরকে স্ট্রেসে ফেলে দেয়, তখন ব্রেইন প্রজেস্টেরন তৈরি কমিয়ে দেয়
৫)ওমেগা থ্রি-ওমেগা সিক্স ইমব্যালেন্স
৬)এল আর্জিনাইন ডেফিসিয়েন্সি-প্রজেস্টেরন তৈরি হতে এটা লাগবেই
৭)লাইসিন ডেফিসিয়েন্সি-প্রজেস্টেরন তৈরি হতে এটাও লাগবেই
৮)পাইরিডক্সিন ডেফিসিয়েন্সি-এটা আপনার ব্রেইনকে স্টেবল করতে লাগবে যেন সঠিক সময়ে আপনি প্রজেস্টেরন তৈরি করতে পারেন।
তো দেখেন, এতগুলি নিউট্রিয়েন্টের সবগুলিই একজন মানুষের নেসেসারিলি কম থাকে না, আবার থাকতেও পারে।
তাই, আপনার প্রজেস্টেরন ঠিক করতে শুধু ডায়েট বা শুধু সাপ্লিমেন্ট যথেষ্ট নাও হতে পারে, প্রয়োজন একটা টোটাল লাইফস্টাইল গাইডেন্স।
এরপরেও কিছু খাবারের কথা বলি, যেগুলি নিয়মিত খেলে প্রজেস্টেরন লেভেল ভাল থাকে।
১)সানফ্লাওয়ার সীড
২)সিসেম সীড
৩)কাঠবাদাম
৪)কাজুবাদাম
৫)পেকান্স
৬)ডার্ক চকোলেট
৭)রোল্ড ওটস
৮)বাদামী চালের ভাত
৯)ভুট্টা-সয়বিন না খাওয়া গরুর গোশত
১০)বাড়িতে ফিড ছাড়া পালা মুরগীর গোশত
১১)খাটি ঘি-মাখন
১২)গাঢ় সবুজ শাকসবজি
এই খাবারগুলি খান।
যাদের প্রজেস্টেরন বেশি ওঠানামা করে, বা এক-একাধিক মিসক্যারেজ হয়ে গেছে, তারা দেরি না করে ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্টের সাথে কথা বলুন।
প্রজেস্টেরন ফিক্স করা বেশিরভাগের জন্যই সহজ, কিন্তু বহু মানুষ কেবলমাত্র নিজেদের খামখেয়ালির জন্য বছরের পর বছর চেন্নাই-বেঙ্গালুরু-মুম্বাই ঘুরে, শেষে সিঙ্গাপুর গিয়েও ইনফার্টিলিটির ট্রিটমেন্টে সফল হন না শুধু এই লো প্রজেস্টেরনের সমস্যার কারনে।
প্রজেস্টেরন ঠিক রাখতে ৮-৯ বছর বয়স থেকেই মেয়েদের হেলদি ইটিং হ্যাবিটে অভ্যস্ত করে ফেলুন, দেখবেন তাকে কখনো ফার্টিলিটির জন্য হসপিটালে ঘুরতে হবে না, মানসিক রোগও অনেকটাই কমে যাবে ইনশা আল্লাহ।