ত্বক ফর্সা করার জন্য মানুষের চেষ্টার কমতি নেই। বিশেষ করে মেয়েদের বেলায়। কত টাকা আর শ্রম ব্যয় করে প্রসাধনী সামগ্রী ও পার্লারে। কিন্তু তবুও আশানুরূপ ফলাফল পায় না সবাই। এতকিছু করার আগে কেউ ভাবেও না যে তার ঘরেই তো রয়েছে ত্বক ফর্সা করার দারুণ উপায়। আসলেই তা-ই। আপনার ঘরেই আপনি এমন কিছু উপকরণ পাবেন যা আপনার ত্বককে করবে ঝকঝকে, চকচকে, মসৃণ ও কোমল।
জেনে নিন কোন জিনিসগুলো আপনার চেহারা সুন্দর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
ত্বক ফর্সা করার দারুণ উপায়
মানুষের দেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ হচ্ছে ত্বক বা চামড়া। ত্বককে বলা হয় "শরীরের আয়না"। এটা বলার কারণ হলো, শরীরের কোনো অস্বাভাবিকতা, অসুস্থতা থাকলে তার প্রভাব পড়তে দেখা যায় ত্বকে।
ত্বকের যত্ন না নিলে ত্বক তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য টুকুও হারাতে থাকে। শুধুমাত্র সঠিক যত্নের মাধ্যমেই ত্বককে উজ্জ্বল ও লাবণ্যময় করে তোলা সম্ভব। যাদের ত্বক তথা চেহারা কিছুটা কালো ও শ্যামলা, তারা চামড়া নিয়ে চিন্তা ও হীনমন্যতায় ভোগে বেশি। আর চিন্তা করতে হবে না, আপনার ঘরেই পাওয়া যায় এমন কয়েকটি জিনিস ব্যবহার করেই আপনার ত্বকে আশানুরূপ সৌন্দর্য নিয়ে আসতে পারবেন।
ত্বক ফর্সা করতে যে জিনিসগুলো কার্যকর -
নারিকেল তেল
ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি গুণ সম্পন্ন উপকরণ হলো নারিকেল তেল। আমাদের দেশে এই তেল শুধু চুলে ব্যবহার করতেই দেখা যায় বেশি। কিন্তু বিশুদ্ধ নারিকেল তেল যে আপনার চামড়ার লাবণ্যময়ী ভাবটা ফিরিয়ে আনতে ও তা ধরে রাখতে পারে তা কি জানেন? এতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট, প্রদাহ প্রতিরোধী কার্যকারিতা ও ক্ষত নিরাময়ের উপাদান। যা আপনার ত্বককে করে তুলবে ভেতর থেকে নরম, মসৃণ ও উজ্জ্বল।
মুখে কোনো মেকআপ থাকলে তা তুলে নিন। ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে তারপর মাখুন নারিকেল তেল। ১০-১৫ মিনিট রাখার পর ধুয়ে ফেলুন। তবে যাদের এলার্জি আছে, তারা এটি এড়িয়ে চললেই ভালো।
মধু
মসৃণ ও কোমল স্কিন পেতে মধু খুবই উপকারী। সরাসরি মধু না মেখে মধুর সাথে দই ও লেবুর রসের পেস্ট বানিয়ে সেটা মুখে দিলে বেশি কার্যকর। কারণ তিনটিতেই আলাদা আলাদা পুষ্টি গুণাগুণ বিদ্যমান। এই তিনটি উপকরণ একসাথে মিশিয়ে নিন। তারপর ১০-১৫ মিনিট আপনার ত্বকে মাখুন। অতঃপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইবার এই পেস্ট ব্যবহার করলে ফলাফল আপনি নিজেই দেখতে পারবেন।
কলা
কলার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। দ্রুত উজ্জ্বল ত্বক পেতে হলে সেক্ষেত্রে কলা হতে পারে কার্যকর মাধ্যম। কলার খোসায় রয়েছে ব্লিচিং উপাদান যা ত্বক থেকে মৃত কোষ, রোদে পোড়া দাগ ও ময়লা পরিষ্কার করে। কলার খোসার ভিতরের অংশ মুখে, হাতে, পায়ের ত্বকে ঘষে মাখুন কয়েক মিনিট। তারপর গোসল করে পরিষ্কার করে নিন।
আবার একটি পাকা কলা চটকে নিয়ে তাতে দুধ মিশিয়ে পেস্ট করে ত্বকে লাগান। সপ্তাহে দুইদিন করুন। ফলাফল নিজেই প্রত্যক্ষ করবেন।
ডিম
ডিম শুধু খাবারের রাজা নয়, আরও ব্যবহার রয়েছে ডিমের। ত্বকেও ডিম দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ফেস প্যাক লাগানোর ফলে ত্বক হবে উজ্জ্বল, কোমল। ডিমের কুসুম গলিয়ে সেটা মুখে লাগান। ১০-১৫ মিনিট রাখার পর পরিষ্কার করে ফেলুন।
সপ্তাহে অন্তত একবার এটি করুন।
টমেটো
ভিটামিনের পাশাপাশি টমেটোতে আরও উপাদান থাকে যেগুলো ত্বকের যত্নে কার্যকর। টমেটো ত্বকের রোদে পোড়া দাগ, মৃত কোষ দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর। একটি অথবা দু'টি টমেটো পিষে নিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ঢেলে দিন। একসাথে মিশ্রণ বানিয়ে তা মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫-২০ মিনিট। তারপর ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুইবার এই পেস্ট ব্যবহারে ত্বকে উজ্জ্বলতা দেখা দিবে।
টমেটোর রস ও হলুদের গুঁড়াও একসাথে মিশ্রণ করে তা ত্বকে লাগাতে পারেন। আরও ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে এতে।
আলু
আলুর খোসা হচ্ছে প্রাকৃতিক ব্লিচিং যুক্ত। শুধু আলুর খোসার ভিতরের অংশ মুখে ঘষে লাগাতে পারেন। আরও ভালো ফল পেতে আলুর খোসা পিষে নিয়ে লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে সেটা মুখে লাগান। সপ্তাহে দুই-তিন দিন ব্যবহার করুন।
হলুদ
বিয়ের সময় সারা শরীরে হলুদ মাখার প্রচলন দেখা যায় বাংলাদেশ ও ভারতে। এটা সবাই জানে হলুদের মধ্যে থাকা ভেষজ গুণ চেহারা সুন্দর করে।
কাঁচা হলুদ বেঁটে অথবা পিষে নিয়ে তা মুখসহ সারা শরীরে মেখে ২০-৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইদিন এটি প্রয়োগ করতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই ত্বকে উজ্জ্বলতা আসবে।
আরও কিছু উপায়
বেসনের সাথে দুধ মিশিয়ে পেস্ট, অ্যালোভেরা, লেবুর রসের সাথে চিনি মিশিয়ে মুখে লাগালেও অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
কিছু নিয়ম
- দিনে একবার হলেও মুখ পরিষ্কার করুন। পরিষ্কার পানি দিয়ে সকালে এবং রাতে দুইবার মুখ ধুইবেন। ভালো হয় ক্লিনজার দিয়ে ক্লিন করলে। কসমেটিকস এর দোকান থেকে আপনার ত্বকের উপযোগী ক্লিনজার কিনে নিন।
- সপ্তাহে অন্তত একবার ত্বক এক্সফোলিয়েট বা ঘষে ঘষে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। তাতে ত্বক থেকে ময়লা, মৃত কোষ, বিভিন্ন দাগ দূর হবে।
- দিনে দুইবার অর্থাৎ সকালে ও রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
- সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল বেশি করে খান। দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
- পর্যাপ্ত ঘুমান।
শেষ কথা
এই কাজগুলো করার মাধ্যমে কিছুদিনের মধ্যে আপনার ত্বক ফর্সা করা সম্ভব হবে। বেশি বেশি খরচ না করে ঘরোয়া এই উপায়গুলো চেষ্টা করুন। হতাশ না হয়ে কয়েক মাস চালিয়ে যান। ফলাফল পাবেন।