ছোট থেকে বড় সবাই জীবনের কোনো না কোনো সময় কাশির মতো সমস্যায় পড়ে। কাশি কোনো খারাপ রোগ নয়। এটি বিভিন্ন রোগের উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাশি হওয়ার কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তন। শীত আসতে থাকলে অথবা গরমের শুরুতে আবহাওয়ার পরিবর্তনে যেকেউ সর্দি ও কাশির সমস্যায় পড়তে পারে। এটা স্বাভাবিক ও সাময়িক একটি শারীরিক অবস্থা। কিন্তু যদি একনাগাড়ে কাশি হতে থাকে এবং অনেকদিন পর্যন্ত চলতে থাকে তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে তা দূর করার প্রয়োজন হতে পারে।
এই আর্টিকেলে জেনে নিন যেকোনো রকমের কাশি দূর করার কার্যকর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।
কাশি হওয়ার কারণ
কাশি কোনো জটিল রোগ নয়। এর মাধ্যমে গলা ও ফুসফুস পরিষ্কার হয়। গলা, নাক, ফুসফুস অথবা শ্বাসতন্ত্রের কোথাও ময়লা ও জীবাণু থাকলে কাশি হওয়ার মাধ্যমে তা পরিষ্কার হয়ে যায়। এটি স্বাভাবিক একটি শারীরিক প্রক্রিয়া।
এছাড়া কাশির জন্য সবচেয়ে বেশি যে কারণটি দায়ী তা হচ্ছে আবহাওয়ার ও পরিবেশের পরিবর্তন। আবহাওয়া ও পরিবেশের পরিবর্তনে ভাইরাল বা সাধারণ সর্দি-কাশি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জনিত কোনো ইনফেকশন, এলার্জি এসব কারণেও কাশি হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক মহামারী করোনা ভাইরাসেরও অন্যতম উপসর্গ হচ্ছে শুকনো কাশি। ধুমপান ও তামাকের কারণেও কাশি হয়।
স্বাভাবিক ঘটনা হলেও একনাগাড়ে কাশি হতে থাকলে নানান সমস্যা হতে থাকে। ঠিকমতো কথা বলতে না পারা, ঘুমে ব্যাঘাত, গলা ব্যথা, বুকে ব্যথার মতো সমস্যা হয়ে থাকে। তাই কাশি দূর করা এক রকম বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায় তখন।
কাশি যে কারণেই হোক, চিন্তিত না হয়ে নিচে উল্লেখিত ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করলে কোনো ওষুধ না খেয়ে সহজেই কাশি থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
কাশি দূর করার কার্যকর ঘরোয়া উপায়
গড়গড়িয়ে কুলি অর্থাৎ গার্গল : খুবই কার্যকর ও আরামদায়ক এই পদ্ধতি। কুসুম গরম পানিতে ১/২ চা-চামচ লবণ ছেড়ে দিয়ে পানির সাথে লবণ গুলিয়ে সেই পানি দিয়ে গড়গড়া সহ কয়েকবার কুলি করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় সন্ধ্যার সময় এবং ঘুমানোর আগে করলে। ছোট বাচ্চারা গড়গড়া সহ কুলি করতে পারে না, তাই শিশুদেরকে এটা করতে দেওয়া ঠিক হবে না।
কাশি দূর করার কার্যকারী কিছু সিরাপের নাম
চা : প্রচলিত একটি উপায়। সর্দি-কাশি হলেই দেখা যায় অনেকে চা খায় এবং উপকারও পায়। বিশেষ করে আদা চা ও মসলা চা কাশির ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর। সকালে, সন্ধ্যায় ও ঘুমানোর আগে আদা চা অথবা মসলা চা পান করুন। ছোট বাচ্চাদেরকে চা দেওয়ার সময় সাবধান থাকবেন। শিশুরা বেশি গরম চা ও মসলা খেতে পারে না, তাই তাদের জন্য সহনীয় হয় এমনভাবে চা বানিয়ে খাওয়ান।
আদা :এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপাদান আদা। সাথে রয়েছে প্রদাহ প্রতিরোধী গুণও। চায়ের সাথেও আদা খাওয়া যায়। আবার কুচি কুচি করে কেটে লবণ মাখিয়েও খাওয়া যায়। কাশি থাকাকালীন প্রতিদিন আদা খান এক টুকরা করে হলেও। কাশি দ্রুত নিরাময় হবে।
হলুদ : প্রদাহ প্রতিরোধী গুণাগুণের জন্য নানাবিধ কাজে ও চিকিৎসায় হলুদের ব্যবহার হয়ে থাকে। কাশি সারাতেও হলুদ উপকারী। একটু গরম পানিতে আধা চামচ হলুদ মিশিয়ে তা পান করুন অথবা গরম দুধের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
মধু : গলা ব্যথা, গলায় তেঁতো স্বাদ এরকম সমস্যা গুলো দূর করতে মধু ব্যবহার হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। কাশির নিরাময়েও মধু কার্যকর। এন্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহ প্রতিরোধী উপাদান থাকায় শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন প্রদাহ অর্থাৎ সমস্যা সমাধানে মধু অনেক উপকারী। কিছু কিছু ওষুধের চেয়েও মধু অধিক কার্যকর। কুসুম গরম পানিতে ২ চা-চামচ মধু, কিছুটা লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। অথবা গরম দুধেও মধু মেশাতে পারেন। সকালে ও রাতে ঘুমানোর আগে খেলে বেশি ভালো।
রসুন : জীবাণু প্রতিরোধী হওয়ায় রসুন গলা ও ফুসফুস থেকে বিভিন্ন জীবাণু দূর করতে সহায়ক। রাতে এক অথবা দুই কোয়া রসুন চিবিয়ে খান। কাঁচা রসুন খেতে না পারলে একটু লবণ মিশিয়ে নিতে পারেন। অল্প সময়ের মধ্যেই ফলাফল পেতে থাকবেন।
তুলসী : সর্দি-কাশির চিকিৎসায় তুলসীপাতার ব্যবহার অনেক পুরনো। তুলসীপাতার রস দিয়ে চা বানিয়ে অথবা পাতা বেঁটে পিষে তাতে মধু যোগ করে খেতে পারেন। আবার গরম পানিতে তুলসীপাতা ছেড়ে দিয়ে সেই পানির বাষ্প নাক-মুখ দিয়ে নিলেও আরাম পাওয়া যায়।
বাষ্প নিন : শুকনো আবহাওয়ার কারণে কারও কারও কাশি হতে পারে। আবহাওয়া শুকনো থাকার ফলে গলা শুকিয়েও কাশি হতে পারে। এমন দিনে কাশি এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। গোসল করার পর একটা পাত্রে গরম পানি রেখে সেটার উপর নাক-মুখ রেখে বাষ্প গ্রহণ করুন। এতেও কাশি অনেকটা দূর হবে।
তরল খাবার খান : গরম তরল খাবার স্যুপ, ডাল, চা এগুলো কিছুক্ষণ পরপরই খান। শুকনো গলার জন্য যদি কাশি হয়, তাহলে তা সহজেই এরকম খাবারগুলো খাওয়ার মাধ্যমে সেরে যাবে।
কিছু কাজ থেকে বিরত থাকা : অ্যালকোহল ও ধুমপান, চকোলেট, এসিড যুক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
এই উপায়গুলো নিয়মিত কয়েকদিন মেনে চলতে পারলেই দ্রুত কাশি দূর হয়ে যাবে।