রমজানে ডায়াবেটিস কিভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন?

রমজানে ডায়াবেটিস কিভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন?

রমজানে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় 

দেখেন, রমজানে ডায়বেটিস এমনিতেই নিয়ন্ত্রনে থাকার কথা। কিন্তু অনেকেরই আছে উলটো ডায়বেটিস আনকন্ট্রোল্ড হয়ে যায়।

দেখা আচ্ছে, সেহরীর ৫-৬ ঘন্টা পরেও মাথা ঘোরাচ্ছে তো ঘোরাচ্ছেই, ওদিকে ইফতারের দু ঘন্টা আগে থেকে হাত পা অসাড় হয়ে আসছে, তীব্র পিপাসা, গ্লুকোজ লেভেল নেমে গেছে, বমি পাচ্ছে।

আবার ইফতারের পর মনে হচ্ছে চোখে আপনি ঝাপসা দেখছেন, মাথা ফাকা ফাকা লাগছে, কিছু ভাবতে পারছেন না, মগজটা কাজ করাই থামিয়ে দিয়েছে। তারাবীর নামাজে গিয়ে দেখছেন পা টলছে।

এই সমস্যার সমাধান করতে হলে এসব কেন হয় তা বুঝতে হবে।

প্রথমত, সাহরীর পর মাথাঘোরার ব্যাপারটা সাধারনত হাইপারগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়া। ইফতারের আগে দুপুর থেকে যে ক্লান্তি লাগে, বমি বমি ভাব হয় এটা সাধারনত হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া।

আবার ইফতারের পর যে মাথা ঘোরানো বা ঝাপসা দেখা, এটা কিন্তু ভিন্ন ধরনের হাইপোগ্লাইসেমিয়া, একে বলে রিএক্টিভ হাইপোগ্লাইসেমিয়া।

এখন এই বিষয়টা বন্ধ করতে গেলে আমাদেরকে এর বেইসিক ফিজিওলজি-ফুড কেমিস্ট্রি বুঝতে হবে।

একদম সহজভাবে বলতে গেলে, আপনি সাহরীতে যে খাবারগুলি খান তা মেটাবোলাইজ করার জন্য শরীর ইনসুলিন সিক্রেট করে। খাবার থেকে পাওয়া এনার্জি শরীর গ্লুকোজে কনভার্ট করে। গ্লুকোজ আমাদের শরীরের কোষে ঢোকে ইনসুলিনের মাধ্যমে।

 ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা 

টাইপ টু ডায়বেটিক প্যাশেন্টদের দুটো ইনসুলিন সংক্রান্ত সমস্যা থাকে।

১)হাইপারইনসুলিনেমিয়া

২)ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স

এই দুটো সমস্যা যাদের থাকে তাদের দেখা যায় রক্তে থাকা গ্লুকোজ কোষের ভেতরে প্রবেশ করতে চায় না। ফলে লম্বা সময় ধরে রক্তে বাড়তি গ্লুকোজ ভেসে বেড়ায়।

এটা এড়ানোর তিনটা উপায় আছে।

১)আপনাকে সেহরীতে খেতে হবে লো গ্লাইসেমিক ফুড, এমন কার্ব যা ধীরে ধীরে রক্তে গ্লুকোজ ছাড়ে।

এর মধ্যে আছে, বার্লি, রোল্ড ওটস, ছোলা, ব্রাউন রাইস(ব্রাউন রাইস মিডিয়াম গ্লাইসেমিক ফুড), মিষ্টি আলু। এগুলো খাবেন টোটাল মিলের চার ভাগের এক ভাগ।

মিলের অর্ধেক থাকবে শাকসবজি এবং শেষ চার ভাগের এক ভাগ হবে প্রোটিন।

ফ্রুটস সেহরীতে খাবেন না, কারন ৫০% ফ্রুট সুগার খুব দ্রুত লিভারে চলে যায়।

২)সেহরীর আগে কিছুটা ওয়েট ট্রেইনিং করা। ৩-৪ ভ্যারিয়েশনের প্রতিটায় ৮-১২টা রেপ ট্রাই করলেই যথেষ্ট। সেলুলার ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমে যাবে। কিন্তু এর সাইড ইফেক্ট হল, আপনার দুপুরবেলা ভীষন ক্ষুধা লাগবে।

৩)১ নম্বর পদ্ধতি অনুসরনের সাথে সাথে সাহরীর আগে বা পরে ভিটামিন বি-১-১০০ এমজি এবং ম্যাগনেসিয়াম-৪০০-৫০০ মিলিগ্রাম গ্রহন করা। সাথে খাবার আগে নিতে পারেন এপল সিডার ভিনেগার। এপল সিডার ভিনেগারের মধ্যে আমার প্রেফারেন্স এলিক্সির, আর ম্যাগনেসিয়ামে লাইফ এক্সটেনশন।

এই তিন পদ্ধতি অনুসরন করলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমে আসবে এবং দিনের বেলা হাইপারগ্লাইসেমিয়া থেকে মুক্ত থাকবেন।

উল্লেখ্য, ইনসুলিন বা ডায়বেটিস সংক্রান্ত মেডিকেশনের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরী।

এখানে আমি হাই ফ্যাট ডায়েটের পরামর্শ দিলাম না কেন??

কারন, সেহরীতে হাই ফ্যাটে গেলে দিনের বেলা পিপাসা বেশি লাগবে, সময়টা চৈত্র বৈশাখ মাস। ব্যাপারটা তাই সবার মাথায় রাখা দরকার।

এভাবে নিয়ম মেনে খাওয়া দাওয়া করলে রমজান মাসে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে রোজা পালন করতে কোনো সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ। 

নিউট্রিশনিস্ট সজল।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url