সাম্প্রতিক সময়ে প্রযুক্তির জগতে যে বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সেটি হলো চ্যাটজিপিটি। মানুষের মতো হুবহু তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে দিতে পারে বলে অনেকেই এটিকে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। কিন্তু আসলেই কি চ্যাটজিপিটি সকল কর্মক্ষেত্র দখল করতে পারবে?
এই পোস্টের মাধ্যমে এই বিষয়টি আলোকপাত করা হবে।
চ্যাটজিপিটি কি?
চ্যাটজিপিটি একটি বট। রোবট সংস্করণের একটি অংশ হচ্ছে বট। নাম দেখেই চ্যাটজিপিটি সম্পর্কে একটা ধারণা আসে যে এটি একধরণের চ্যাট বট। ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলোতে আমরা অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন চ্যাট বটের সাথে পরিচিত। নিজেদের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ছোট-বড় অনেক ফেসবুক পেইজ গুলো অটোমেটেড চ্যাট বট সিস্টেম চালু করে থাকে। কেউ সেসব পেইজে মেসেজ করলে সেকেন্ডের মধ্যেই অটোমেটিক রিপ্লাই চলে আসে। এই সিস্টেমই চ্যাট বট।
চ্যাটজিপিটিও তেমন একটি বট। কিন্তু এর কাজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বটগুলোর মতো না। চ্যাটজিপিটির কাজ আরও বেশি, এটি আরও বেশি উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন। "ওপেনএআই" নামক প্রযুক্তি কোম্পানির তৈরি সবচেয়ে উন্নত ও ব্যবহার উপযোগী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পন্ন সিস্টেম হলো চ্যাটজিপিটি।
ফেসবুক একাউন্ট ডিজেবল হওয়ার কারণ গুলি জেনে নিন
যা ব্যবহারকারীদেরকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হাজার হাজার শব্দের তথ্য সংগ্রহ করে দিতে সক্ষম। চ্যাটজিপিটিকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান যাবতীয় তথ্য ও উপাত্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে, যার কারণে এটি মুহুর্তের মধ্যেই ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহারকারীকে দিতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে বলতে গেলে, যেমন ধরুণ আপনি চ্যাটজিপিটিকে জিজ্ঞেস করলেন " টমেটোর গুণাগুণ ও উপকারিতা কী?" সম্পর্কে। তখন সে আপনাকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ইন্টারনেটে থাকা টমেটো সম্পর্কে অনেক তথ্য আপনার সামনে লিখে দিবে।
চ্যাটজিপিটি কি সকল কর্মক্ষেত্র দখল করতে পারবে?
সহজ কথায় যদি এই কথার জবাব দিতে চাই, তাহলে এককথায় জবাব হবে, "না"। আরও পরিষ্কারভাবে বললে " না, চ্যাটজিপিটি সকল কর্মক্ষেত্র দখল করতে পারবে না।"
কেন পারবে না তা এখন জানতে পারবেন।
আমি পূর্বে বলেছি যে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সংস্করণকে এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছে যা শুধু ইন্টারনেটে থাকা বিভিন্ন তথ্যের আলোকেই জবাব দিতে সক্ষম। নিজে থেকে কোনো প্রশ্নের নির্দিষ্ট জবাব সে দিতে পারে না। ইন্টারনেটে থাকা সকল তথ্য সঠিক নয়। ইন্টারনেটের অনেক তথ্যই ভুলে ভরা। কোন তথ্যটি ভুল আর কোনটি সঠিক তা এই চ্যাট বটটি শনাক্ত করতে পারে না। সে আপনাকে ভুল ও সঠিক মিলিয়ে এক জগাখিচুড়ি বানিয়ে জবাব দিয়ে দিবে, যেহেতু সে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করতে পারে না।
এই কথা থেকে বোঝা যায়, যেসব কাজ সৃজনশীল, বাস্তব, ভুল ও সঠিকের পার্থক্য রয়েছে এবং অনুভূতির সাথে যুক্ত - এমন তথ্য ও কাজগুলো কোনো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দ্বারা পূরণ করা সম্ভব নয়। সেসব কাজের ক্ষেত্র আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির মাধ্যমে দখল করা কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ। চ্যাটজিপিটিও যেহেতু একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্র, সেহেতু এটির সাহায্যেও সকল কর্মক্ষেত্র দখল করা যাবে না সহজে।
কোন ক্ষেত্র গুলো দখল করতে পারবে না?
প্রথমেই বলবো লেখালেখির ক্ষেত্র সম্পর্কে। লেখালেখি একজন লেখকের পেশা। লেখালেখির সাথে আবেগ-অনুভূতি, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করা, সৃজনশীলতা জড়িত। তাই চ্যাটজিপিটি লেখকদের কর্মক্ষেত্রে এত সহজে জায়গা নিতে পারবে না।
লেখক, মনোবিজ্ঞানী, চিকিৎসক, উদ্যোক্তা, চিত্রশিল্পী, আইনজীবী, রাঁধুনি, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ - এরকম ক্ষেত্রগুলোতে মানুষের মস্তিষ্কের সৃজনশীলতা, মানুষের হাত, আবেগ-অনুভূতি, ভুল-সঠিকের বিষয়গুলো জড়িত। তাই এই কর্মক্ষেত্র গুলো চ্যাটজিপিটি কেন, কোনো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির মাধ্যমে দখল করা সহজ নয় এবং জায়গা নিতেও পারবে না।
চ্যাটজিপিটি শুধু হতে পারে আপনার গবেষণার সহায়ক। ইন্টারনেটে থাকা তথ্য দিয়ে সে আপনাকে সাহায্য করতে পারে বড়জোর। কিন্তু সে আপনার মৌলিক ও সৃজনশীল কাজগুলো করে দিতে পারবে না।