এন্ড্রয়েড হলো বিশ্বব্যাপী বেশিসংখ্যক ব্যবহৃত হওয়া মোবাইল ফোন অপারেটিং সিস্টেম। বিশ্বে এন্ড্রয়েড ফোন এর ব্যবহারকারী সবচেয়ে বেশি। জনপ্রিয় এই অপারেটিং সিস্টেম এর ফোনগুলো আধুনিক ফিচার সমৃদ্ধ হলেও, অপারেটিং সিস্টেমটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন উঠেছে বিশ্বজুড়ে। ব্যবহারকারীদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে এটি। বিভিন্ন ভাইরাস ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত হয়েছে অনেক ব্যবহারকারীই। কিন্তু কেন এন্ড্রয়েড ফোন ভাইরাস যুক্ত হয়? কীভাবে এন্ড্রয়েড ফোন ভাইরাস মুক্ত করবেন? জেনে নিন এসব বিষয়ে।
এন্ড্রয়েড ফোন ভাইরাস যুক্ত হওয়ার কারণ
মানুষের নিজেদের ভুল ও লোভের কারণেই নিজের শখের ফোনে ভাইরাস ডেকে আনে অজান্তেই। বিভিন্ন চমকদার বিজ্ঞাপন আর অফারে লোভে বশবতী হয়ে সেসব বিজ্ঞাপন ও অফারে থাকা লিংক গুলোতে ক্লিক করার মাধ্যমে মূলত ফোন ভাইরাস যুক্ত হয়।
আবার গুগল প্লেস্টোরে পাওয়া যায় না এমন কোনো অ্যাপ/সফটওয়্যার কোনো ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করার মাধ্যমেও ফোনে ম্যালওয়্যার যুক্ত হয়ে যায়।
ফোনে ভাইরাস প্রবেশ করলে বোঝার উপায়ও আছে। ফোন আগের তুলনায় হুট করেই দ্রুত চার্জ ফুরিয়ে যাওয়া, ফোন অত্যধিক গরম হওয়া, আপনার অজান্তেই অপরিচিত কোনো অ্যাপ ইনস্টল হওয়া, মোবাইল ঠিকমতো কাজ করে না, হ্যাং করে, কোথায়ও কল করলে অটোমেটিক কল কেটে যায়, অথবা কল করলে অটোমেটিক কল রেকর্ড হয়, মোবাইল কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েকবার করে নিজে থেকে বন্ধ ও চালু হয়, এগুলো হলো ফোনে কোনো ক্ষতিকর ভাইরাস ঢোকার সাধারণ লক্ষণ।
এন্ড্রয়েড ফোন ভাইরাস মুক্ত করার উপায়
একাধিক উপায়ে আপনি আপনার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়া ফোনটি ভাইরাস মুক্ত করতে পারবেন। এখানে কার্যকর কয়েকটি উপায় দেয়া হলো-
১. গুগল প্লে
এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের
সকল ফোনেই গুগল প্লেস্টোর বা প্লে সার্ভিস থাকে। গুগল প্লে প্রোটেকশন চালু রাখার মাধ্যমে আপনার ফোনে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারবে না। প্রবেশ করতে গেলে গুগল আপনাকে সংকেত দিবে।
২. সেফ মোড
যদি বুঝতে পারেন উপরে উল্লিখিত ভাইরাস আক্রমণের লক্ষণ আপনার ফোনে আছে, তাহলে ফোনকে সেফ মোডে রিস্টার্ট করে ভাইরাস মুক্ত করতে পারবেন। এটা করার জন্য প্রথমে ফোনের পাওয়ার বাটনে কয়েক সেকেন্ড চেপে ধরে রিবুট অপশন আনুন। রিবুটে ক্লিক করুন। ফোন নিজে থেকে বন্ধ হয়ে আবার চালু হবে। চালু হওয়ার পর সেটিংস-এ যান।
ফেসবুক একাউন্ট ডিজেবল হওয়ার কারণ গুলি জেনে নিন
সেটিংস এর অ্যাপস (Apps) নামক অপশনে ক্লিক করলে দেখতে পাবেন কোন কোন অ্যাপ আপনি ইনস্টল করেছেন। যে অ্যাপ আপনি ইনস্টল করেননি এবং সন্দেহজনক মনে হয় সেই অ্যাপগুলো আনইন্সটল করে দিন। আনইন্সটল করা হয়ে গেলে পুনরায় ফোন রিবুট করুন। তারপর চালু হলে স্বাভাবিকভাবেই ফোন ব্যবহার করুন।
৩. ব্রাউজার হিস্টোরি
যেহেতু ব্রাউজার দিয়েই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয়, তাই ব্রাউজারের মাধ্যমেই বেশিরভাগ ভাইরাস আক্রমণের ঘটনা ঘটে।
সেফ মোড পদ্ধতি ব্যবহার করার পরও যদি মোবাইলে ভাইরাস থেকে গিয়েছে বলে উপরোক্ত লক্ষণ থেকেই যায়, তাহলে এই ধাপ প্রয়োগ করুন। আপনার ফোনের ব্রাউজারে যান। বেশিরভাগ এন্ড্রয়েড ফোনে ক্রোম ব্রাউজারই বেশি ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা। আবার ফোন কোম্পানির নিজস্ব ব্রাউজারও ব্যবহার করে অনেকে।
যে ব্রাউজারই হোক, সেটিংসে গিয়ে আপনার ফোনের ব্রাউজারের নামে ক্লিক করুন। তখন দেখবেন Clear Cache বা Clear Data নামে একটা অপশন আছে। সেটাতে ক্লিক করে ব্রাউজারের সকল হিস্টোরি ডিলিট করে নিন। পরে ফোন আবার রিবুট /রিস্টার্ট করুন।
৪. মেমোরি বা এসডি কার্ড
উপরের ২ ও ৩ নম্বর পদ্ধতি প্রয়োগের পরও ফোন অস্বাভাবিক থাকলে তাহলে যদি ফোনে এসডি কার্ড ব্যবহার করে থাকেন সেটা খুলে নিন। খুলে নিয়ে আবার ২ ও ৩ পদ্ধতি দু'টি প্রয়োগ করুন। তারপরও যদি ঠিক না হয়, তাহলে এসডি কার্ডে কোনো সমস্যা নেই। এসডি কার্ড ফরম্যাট করতে হবে না। আর যদি এসডি কার্ড খোলার পর ঠিকঠাক কাজ করে, তাহলে এসডি কার্ডটি ফরম্যাট দিয়ে তারপর আবার ফোনে প্রবেশ করাবেন।
৫. ফ্যাক্টরি রিসেট
উপরের কোনো পদ্ধতি কাজে না আসলে শেষ অপশন হলো ফোনকে ফ্যাক্টরি রিসেট করা। এটিই সবচেয়ে কার্যকর উপায়। রিসেট করলে ফোনের সকল ফাংশন, ফিচার নতুনের মতো হয়ে যাবে। রিসেট করতে ফোনের সেটিংসে গিয়ে Factory Data Reset ক্লিক করুন। অথবা কম্পিউটার দিয়ে ফ্ল্যাশ করে নিন।
৬. এন্টিভাইরাস অ্যাপ
গুগল প্লে প্রোটেকশন চালু রাখতে পারলে ভালো। পাশাপাশি ফোনে এন্টিভাইরাস অ্যাপ ব্যবহার করুন। এই অ্যাপ ভাইরাস মুক্ত রাখতে কাজ করে। দিনে একবার করে হলেও ফোনের এন্টিভাইরাস অ্যাপটিতে গিয়ে ফোন স্ক্যান করে রাখবেন। কোনো ভাইরাস থাকলে স্ক্যান করার সময় দেখতে পারবেন। পরে এন্টিভাইরাসের মাধ্যমে ভাইরাস দূর হয়ে যাবে।
বর্তমানের মোবাইল ফোন গুলোতে আলাদা করে এন্টিভাইরাস অ্যাপ ইনস্টল করতে হয় না। ফোনের ফিচারের সাথেই এন্টিভাইরাস যুক্ত করে দেয়া হয় মোবাইল প্রস্তুতকারক কোম্পানি থেকে। আর যদি আলাদা করে এন্টিভাইরাস অ্যাপ ইনস্টল করতে হয় তাহলে গুগল প্লেস্টোরে বিভিন্ন অ্যাপ পাওয়া যায় যেমন- কেস্পারস্কাই, এভাস্ট সেগুলো থেকে যেকোনো একটি ইনস্টল করে ব্যবহার করতে পারেন।
এই উপায়গুলো অনুসরণ করলেই এন্ড্রয়েড ফোন ভাইরাস মুক্ত রাখতে পারা যাবে।