গুড়া কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায়

 

গুড়া কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায়

যত প্রকারের কৃমি আছে, সেগুলোর মধ্যে গুঁড়া কৃমি সবচেয়ে বেশি হয় মানুষের অন্ত্রে। অন্ত্রে বসবাস করা এক পরজীবি জীব হলো কৃমি। কয়েক ইঞ্চি থেকে শুরু করে কয়েক ফুট পর্যন্ত দৈর্ঘ্য হয় কোনো কোনো কৃমির। বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে গুঁড়া কৃমি হওয়ার ঘটনা বেশি। আর শিশুদের মনে সুতা কৃমির ঘটনা বেশি।

ঠিকমতো প্রতিকারের ব্যবস্থা না নিলে অন্ত্র থেকে রক্ত খেতে খেতে এই পরজীবি ভুক্তভুগীকে রক্তস্বল্পতার মতো মারাত্মক রোগে ভোগাতে পারে। তাই কৃমি প্রতিকার করার ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। গুঁড়া কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায় জেনে নিন ও প্রয়োগ করুন।

গুঁড়া কৃমি কেন হয়?

কৃমি  হওয়ার পেছনে মানুষের করা কিছু ভুলই দায়ী। খালি পায়ে টয়লেটে যাওয়া, টয়লেট শেষে সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে না ধোয়া, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করা, বাসি খাবার খাওয়া, শৌচ কাজ করার পর সাবান দিয়ে হাত না ধুয়েই খাবার খাওয়া ও খাবার পরিবেশন করা, কৃমিতে আক্রান্ত পশুপাখি ধরার পর হাত না ধোয়া,কৃমি আক্রান্ত কেউ কোনো পুকুর বা নদীতে গোসল করলে সেই পানিত কৃমির ডিম ছড়িয়ে পড়ে ফলে সেই জলাশয়ে যারা নামে তারাও আক্রান্ত হয়। ছোট বাচ্চারা হামাগুড়ি দিয়ে চলার কারণে কৃমি সংক্রমিত স্থান থেকে বাচ্চার গায়েও কৃমি ও কৃমির ডিম লেগে যায়  ফলে বাচ্চারাও আক্রান্ত হয়ে যায়। 

বলা যায় কৃমিও একপ্রকার ছোঁয়াচে সংক্রমণ। এর কারণ হলো কৃমি ও কৃমির ডিম যেসব জায়গায় লেগে থাকে, সেসব জায়গায় কেউ বসলে, ধরলে সে-ও কৃমির বেঁচে থাকার অবলম্বনে পরিণত হয়। যার পেটে কৃমি হয়, তার অন্ত্র থেকে রক্ত খেয়েই কৃমি বাঁচে।

শুধু একটি কৃমিই থাকে না, সেখানে কৃমি বংশবিস্তার করে ফলে আক্রান্তের অন্ত্র থেকে রক্ত খাওয়ার পরিমাণও বেশি হয়। প্রাথমিক অবস্থায় যদি তা দূর করার ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে বড় ধরণের ক্ষতির আশংকা থাকে। 

গুঁড়া কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায় 

অনেকেই আলবেন ডিএস এর মতো ওষুধ খেয়ে কৃমি প্রতিকারের চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু ঘরোয়া এমনকিছু উপায় রয়েছে যা প্রয়োগ করলে সহজে কৃমি প্রতিকার করা যায়। 

 আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

ঘরোয়া কিছু উপায় হলো :

আদা

আদা কৃমিকে ডিম পাড়া, রক্ত খাওয়ায় বাঁধা দিয়ে থাকে। আদা খেতে পারেন বেঁটে বা পিষে খাবারের সাথে মেখে, অথবা কুচি করে। ফলাফল মিলবে দ্রুতই।

রসুন

রসুনে সালফার রয়েছে যা খুব কার্যকরভাবেই কৃমিকে গোড়া থেকে নির্মূল করতে পারে। পরজীবি প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে রসুনে। তাই কৃমির মতো পরজীবিকে সহজেই দূর করে রসুন।

ভালো ফলাফল পেতে খালি পেটে কয়েক কোয়া রসুন খান।

হলুদ

আদা ও রসুনের মতো হলুদও পরজীবি প্রতিরোধী উপাদান সমৃদ্ধ। খালি পেটে অন্তত এক টুকরো কাঁচা হলুদ চিবিয়ে অথবা বেঁটে নরম করে খান। দ্রুতই উপকার পেতে শুরু করবেন। অথবা গরম পানিতে ২ চামচ হলুদের গুঁড়া মিশিয়েও খাওয়া যাবে।

পেঁপে 

পেট ভালো রাখার উত্তম একটি খাবার। সেই সাথে অন্ত্রকে পরিষ্কার করে কৃমির বাসস্থান ধ্বংস করতে পেঁপে কার্যকর। পাকা পেঁপে খান, চাইলে পেঁপেতে একটু মধু ঢেলে নিতে পারেন। তাতে আরও ভালো ফল মিলবে। কাঁচা পেঁপের রস ও মধু একসাথে করেও খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

নারিকেল তেল

পরজীবি ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিকারের ভালো গুণসম্পন্ন উপাদান রয়েছে নারিকেল তেলে। সকালে ২-৩ চামচ বিশুদ্ধ নারিকেল তেল খেয়ে নিন। খালি পেটেও খেতে পারেন। আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পায়ুপথে একটু নারিকেল তেল মেখে নিবেন। রাতের মধ্যেই কৃমির আক্রমণ ও কৃমির কারণে হওয়া অস্বস্তি দূর হবে।

নিমপাতা 

খুবই প্রচলিত একটি পদ্ধতি। গ্রামে এটা বেশি দেখা যায়। কৃমি হলে নিমপাতা ভেজে খেতে দেখা যায় অনেককে। ভেজে না খেয়ে একমুঠো নিমপাতা বেঁটে পানির সাথে গুলিয়ে খেলে বেশি ভালো। যেকোনো একভাবে খেতে পারেন নিমপাতা।

কুমড়ার বীজ 

এটিও প্রচলিত পদ্ধতি। কুমড়ার কয়েকটি বীজ পিষে গুড়া করে পানির সাথে মিশিয়ে খালি পেটে খেলে কৃমি দূর হবে। কুমড়ার বীজে পরজীবি প্রতিরোধী গুণাগুণ রয়েছে যা কয়েকদিনের মধ্যেই অন্ত্র থেকে কৃমির বাসস্থান নির্মূল করে থাকে। বীজ শুঁকিয়ে বা ভেজে নিবেনচ তারপর গুঁড়া করবেন।

এলাচি 

লবঙ্গ বা এলাচি পরজীবি প্রতিকারে সহায়ক। গরম পানিতে ২-৩ টা এলাচি কিছুক্ষণ ছেড়ে দিন। তারপর সেই পানি পান করুন। খালি পেটে পান করলে বেশি ভালো হয়। চায়ের সঙ্গেও এলাচি ডুবিয়ে পান করতে পারেন।

কালমেঘ 

এটি একটি ভেষজ গুণ সম্পন্ন উপাদান। সরাসরি এই ভেষজ হারবাল সব জায়গায় পাওয়া যায় না। বাজারে এই নামে সিরাপ পাওয়া যায়। এটিও খেতে পারেন। এটি কার্যকর একটি ভেষজ যা খালি পেটে খেলে কৃমি থেকে দ্রুত মুক্তি মিলে।

শেষকথা 

আগেই ওষুধের দোকানে না গিয়ে গুঁড়া কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো প্রয়োগ করে দেখুন। ভেজালমুক্ত উপায়ে সহজেই কৃমি থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। যদি বেশি জটিল অবস্থা হয়, তাহলে ডাক্তারকে দেখিয়ে উপযুক্ত ওষুধ নিন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম