আমাদের দেশে রমজান মাসে শুধু খেজুর খাওয়ার চল লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতায় ভরপুর এই শুকনো ফলটি খাওয়া উচিত প্রতিদিন। রোজ খেজুর খেলে অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায় ও অন্যান্য উপকারও পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক চিনিযুক্ত এই ফল সবার স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী। তবে কিছু নিষেধও রয়েছে।
জানবেন রোজ খেজুর খেলে যেসব রোগ থেকে মুক্তি মিলে ও খেজুর এর যত পুষ্টি গুণ সম্পর্কে।
খেজুর এর যত গুণাগুণ
আরব বিশ্বের নিয়মিত ফল হচ্ছে খেজুর। মধ্যপ্রাচ্যের সেসব দেশে বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় বেশি খেজুর উৎপন্ন হয় এবং সারাবিশ্বে রপ্তানি করা হয়।
খেজুরকে বলা হয় "ন্যাচারাল সুগার ফ্রুট" অর্থাৎ প্রাকৃতিক চিনিযুক্ত ফল। পানি শোষিত হয়ে সম্পূর্ণ নরম ও অনেকটা কাই আকার হয়ে যায়। পানি কমে গিয়ে খেজুর হয়ে ওঠে আয়রন (লৌহ) ভরপুর একটি খাবার। শুধু আয়রনই নয়, খেজুরে থাকে আরও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।
একটি শুকনো খেজুরে থাকে আয়রন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, প্রোটিন, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন-বি, ক্যালরি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট।
অন্যান্য উপাদান গুলোর তুলনায় ফাইবার, আয়রন ও এন্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান বেশি পরিমাণে।
রোজ খেজুর খেলে যেসব রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
এন্টিঅক্সিডেন্ট এমন একটি উপাদান যা মানুষের দেহকে করে তুলে উন্নত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারী, ফলে কোনো রোগ সহজে দেহে আক্রমণ করতে পারে না। এন্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় বিভিন্ন খাবার থেকে। সেই খাবারগুলোর মধ্যে খেজুর একটি। খেজুর এন্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর যা বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।
চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করার খাবার সমুহ
খেজুর খেলে যেসব রোগ থেকে মুক্তি মিলে :
হৃদরোগ
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস হচ্ছে হৃদরোগের অন্যতম কারণ। এই রোগ গুলো নিয়ন্ত্রিত রাখতে খেজুরের এন্টিঅক্সিডেন্ট কার্যকর। খেজুর হার্টবিট স্বাভাবিক রাখতে অবদান রাখে।
প্রদাহ প্রতিরোধ
শরীরের ভিতরে, বাহিরে কোথাও আঘাত, ফোলা, ক্ষত থাকলে নিয়মিত একটি কিংবা দুইটি খেজুর খান। খেজুরে রয়েছে প্রদাহ প্রতিরোধী উপাদান যা শরীরকে বিভিন্ন ধরণের প্রদাহ থেকে মুক্তি দেয়।
মস্তিষ্কের জন্য
মানুষের মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান এন্টিঅক্সিডেন্ট। এন্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্ককে স্বাভাবিক কাজ চালাতে এবং মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগ যেমন- আলঝেইমার্স, ডিমেনশিয়া থেকে মুক্ত রাখে। খেজুরে রয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি।
ডায়াবেটিস এর প্রতিরোধ
"পলিফেনল" নামে একটি উপাদান খেজুরে থাকে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত রাখতে সাহায্য করে।
পেটের রোগ থেকে মুক্তি
বদহজম, গ্যাস, পেটফাঁপা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো পেটের সমস্যা গুলো থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে খেজুর। পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে বিধায় পেটের বিভিন্ন রোগও দূরে রাখে।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য
যেসব গর্ভবতী নারীরা গর্ভধারণের শেষ পর্যায়ে অর্থাৎ শেষ তিন মাসে থাকে তারা নিয়মিত খেজুর খেলে নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে ব্যাপক সুবিধা পাওয়া যায়। পাশাপাশি গর্ভকালীন সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্যতা, গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যা থেকেও মুক্ত রাখে খেজুর।
চোখ ভালো রাখতে
রেটিনা হচ্ছে চোখের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। রেটিনা সহ সমস্ত চোখের বিভিন্ন সমস্যা থেকে দূরে রাখতে খেজুরে থাকা উপাদানগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
রক্তস্বল্পতা দূরীকরণ
আয়রনের অভাবে হওয়ার রোগগুলোর মধ্যে রক্তস্বল্পতা একটি। খেজুরে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে, সেহেতু খেজুর খেলে রক্তস্বল্পতা দূর করা সম্ভব সহজেই।
এগুলো ছাড়াও আরও রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে খেজুর। তাই শুধু রমজান মাসেই খেজুর না খেয়ে প্রতিদিন অন্তত একটা করে খেজুর খাওয়ার চেষ্টা করুন।
শেষকথা
রোজ খেজুর খেলে এই রোগ গুলো থেকে মুক্তি মিললেও কিছু কিছু মানুষের জন্য খেজুরের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যাদের এলার্জি ও ডায়াবেটিস আছে তাদের অতিরিক্ত খেজুর খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।