গলা ব্যথা হতে পারে বিভিন্ন কারণে। আবহাওয়ার পরিবর্তন, রোগের লক্ষণ, পাকস্থলীর অস্বাভাবিকতা ইত্যাদি কারণে যে কারোরই গলা ব্যথা হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটা ভয় পাওয়ার মতো কোনো সমস্যা না। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা কোনো রোগের লক্ষণের জন্য হয়। ঢোক গিলতে গলা ব্যথা অনুভূত হয়। ঢোক গেলা বন্ধ রাখলে ব্যথার উপস্থিতি টের পাওয়া যায় না।
আপনাদেরকে জানাবো কেন ঢোক গিলতে গলা ব্যথা হয় এবং গলা ব্যথা হলে করণীয় কী, কীভাবে সহজে গলা ব্যথা দূর করবেন সেসব বিষয়ে।
গলা ব্যথা হওয়ার কারণ
২০২০ সালে কোভিড-১৯ নামক ভাইরাস ঘটিত রোগটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এই মহামারী রোগটির অন্যতম লক্ষণ গুলোর একটি হলো গলা ব্যথা। কিন্তু শুধু এই কারণেই গলায় ব্যথা হয় না। আরও বিভিন্ন কারণ রয়েছে।
আবহাওয়া বদলালে বিশেষ করে গ্রীষ্মের শেষে শীত আসলে সর্দিকাশির সমস্যায় বেশিরভাগ মানুষ ভুগতে শুরু করে। ভাইরাল বা সাধারণ এই সর্দিকাশি হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গলার ব্যথা থাকে। আবার ফ্লু - এর লক্ষণও গলা ব্যথা।
খাবার খাওয়ার পর খাবার পাকস্থলীতে ঠিকমতো না পৌঁছে এসিডের ধাক্কায় উল্টো উপরের দিকে অর্থাৎ গলার দিকে খাবার উঠে আসে। যেটা মূলত পাকস্থলীর ও হজমের দূর্বলতার জন্য হয়ে থাকে। খাবার এভাবে গলায় উঠে আসলেও অনেক সময় গলা ব্যথা করে ও গলায় টক স্বাদ লেগে থাকে।
স্ট্রেপটোকক্কাস সহ অন্যান্য কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে যা মানুষের গলায় আক্রমণ করে। সেসব ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্টি হওয়া সমস্যায়ও গলা ব্যথা হয়।
গলায় কোনো রোগ যেমন- গলায় টিউমার, ক্যান্সার হলে গলায় ব্যথা হয়ে থাকে।
টলসিল, এলার্জি, শুষ্ক গলা, পানিশূন্যতা, পানির পিপাসা, মুখ দিয়ে বেশিক্ষণ শ্বাসপ্রশ্বাস চালাতে থাকলেও গলায় হালকা ব্যথা করে।
রোজ খেজুর খেলে মিলবে যেসব রোগ থেকে মুক্তি
তবে যতগুলো কারণ রয়েছে, সবগুলোর মধ্যে সাধারণ সর্দিকাশি ও শুষ্ক গলার কারণেই প্রায় সকল মানুষ গলায় ব্যথা অনুভব করে। খাবার গিলতে, সবসময়ের মতো ঢোক গিলতে গলা ব্যথা অনুভূত হয়।
গলা ব্যথা হলে করণীয়
হালকা গলা ব্যথা অনুভব করলে তার চিকিৎসা আপনি ঘরেই নিতে পারবেন। হালকা থেকে মাঝারি মানের ব্যথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘরোয়া উপায় প্রয়োগ করে দূর করা যায়।
সেই উপায়গুলো হলো :
কুসুম তরল পানীয়
এটা খুবই প্রচলিত এবং কার্যকর পদ্ধতি। গলা ব্যথা হলে কিছুক্ষণ পরপর হালকা গরম পানি গলায় নিয়ে গড়গড়িয়ে কুলি করলে আরাম পাওয়া যায়। গরম পানিতে একটু লবণ মিশিয়ে নিলে বেশি ভালো। অথবা গরম চায়ের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যাবে। এককথায় হালকা গরম তরল খাবার খাওয়া।
ঠাণ্ডা বরফ
শরীরের কোথাও ব্যথা হলে বরফ ব্যবহার করে ব্যথা নিবারণ করা যায়। গলার ব্যথা হলেও বরফ উপকারী। কয়েক টুকরো বরফ ভালোভাবে ধুয়ে মুখে নিয়ে চুষতে থাকুন অথবা ঠাণ্ডা আইসক্রিম খান, দেখবেন আরাম পাচ্ছেন।
লজেন্স, ক্যান্ডি খাওয়া
শক্ত ক্যান্ডি ও লজেন্স চুষে চুষে খাওয়ার মাধ্যমেও ব্যথা অনেকটা দূর করা যায়।
আদা
ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী গুণ রয়েছে আদায়। যে কারণেই গলা ব্যথা হোক, গরম পানিতে কয়েক কুচি আদা ছেড়ে দিন। তারপর সেই পানি হালকা গরমে হলে তা দিয়ে গড়গড়িয়ে কুলি আা গার্গল করুন কয়েক ঘণ্টা পরপর। আবার গরম পানিতে মধু ও আদার কুচি একসাথে করে নিয়ে খেলেও আরাম পাওয়া যাবে।
হলুদ
হলুদেও রয়েছে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী উপাদান। গরম দুধে কয়েক চামচ হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে খান। দিনে ২-৩ বার খেলেই বুঝবেন উপকার।
আরও কিছু করণীয়
- ধুমপান, তামাক গ্রহণ থেকে দূরে থাকুন।
- মুখ নিয়ে বেশিক্ষণ শ্বাসপ্রশ্বাস চালাবেন না।
- গলা যেন শুঁকিয়ে না যায়, পানির পিপাসা না থাকে সেজন্য দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
- গলায় জোর দিয়ে কথা বলা, চিৎকার চেঁচামেচি করা থেকে বিরত থাকবেন।
- ব্যথা না কমা পর্যন্ত বিশ্রাম নিন।
শেষকথা
গলা ব্যথা বেশিরভাগ মানুষেরই হয়ে থাকে। একেকজনের একেক কারণে হতে পারে। হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার গলা ব্যথা ঘরেই দূর করা যায় উপরে বলা পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে। তীব্র ও প্রচণ্ড ব্যথা হলে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা নিন।