আমাশয় ব্যাকটেরিয়া ঘটিত একটি ছোঁয়াচে রোগ। যা আক্রান্ত ব্যক্তির মল, মলত্যাগ এর পর হাত সাবান পানি দিয়ে না ধুয়ে অন্য কোনো বস্তু স্পর্শ করলে অন্যদের মাঝে আমাশয় ছড়িয়ে পড়ে। অবস্থা কঠিন হয়ে গেলে তখন বেশিরভাগ রোগী হাসপাতালে ছুটে। কিন্তু আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা করার মাধ্যমেই যে এই রোগটি দূর করা যায়, তা সবাই জানে না।
সবাইকে জানাতেই এই আর্টিকেল।
আমাশয়
পেটের যত ধরণের অসুখ হয় তার প্রায় সবই হয় মানুষের অন্ত্রে। আমাশয়ও সেখানে শুরু হয়। শিগেলা, ই. কলি ও সালমোনেলার মতো ব্যাকটেরিয়া গুলো আমাশয় রোগের জন্য দায়ী।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, বাসি পঁচা ও অস্বাস্থ্যকর খাবার, আমাশয়ে আক্রান্ত কোনো প্রাণীর সংস্পর্শ, আক্রান্ত প্রাণীর ব্যবহার করা কোনো বস্তু স্পর্শ করা, আমাশয় আক্রান্ত মানুষ অথবা কোনো প্রাণী যেমন- গরু, ছাগল পুকুরে /নদীতে গোসল করালে আমাশয়ের জীবাণু ছড়িয়ে যায়। পরে আক্রান্ত সেসব জায়গায় কোনো সুস্থ মানুষ ধরলে বা গেলে সে-ও আক্রান্ত হয়ে যায়। এভাবেই আমাশয় রোগ ছোঁয়াচে আকারে প্রাণী থেকে প্রাণীতে ছড়ায়।
আমাশয়ের জীবাণু কারও দেহে প্রবেশ করলে তা প্রথমে অন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রকে আক্রান্ত করে দেয়। পরে আস্তে আস্তে পাকস্থলীতে ছড়ায় ও ডায়রিয়ার সৃষ্টি করে। এটি একটি পরজীবি ঘটিত রোগও।
আপনার বাড়িতে যদি কেউ আমাশয়ে আক্রান্ত হয়ে থাকে, সেই আক্রান্ত ব্যক্তি যেসব জায়গায় বসে, যা স্পর্শ করে, যে পুকুরে বা নদীতে গোসল করে, সেখানে যদি আপনিও যান ও স্পর্শ করে হাত সাবান দিয়ে না ধুয়ে খাবার খান তাহলে আপনিও সংক্রমিত হবেন।
জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক পদ্ধতি
আমাশয় রোগের লক্ষণ
- পেটে ব্যথা, গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার মতো।
- ডায়রিয়া। একদম পাতলা পায়খানা। দিনে ৩ বারের বেশি পায়খানা হওয়া।
- পেটফাঁপা।
- খাওয়ায় রুচি না থাকা।
- শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়া।
- ওজন কমতে থাকা।
- পানিশূন্যতা দেখা দেয়া।
- মাথা ব্যথাও থাকতে পারে।
আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে রোগীকে ঘরোয়া ভাবে চিকিৎসা দিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।
যেভাবে ঘরোয়া চিকিৎসা দিতে হবে :
- দিনে কমপক্ষে ২ গ্লাস কমলার জুস খাওয়া।
- কমপক্ষে ২ গ্লাস লেবুর শরবত খাওয়া।
- ৪-৫ টা পাকা কলা বিশেষ করে বিচি কলা।
- মধু, লেবুর রস ও দুধ একসাথে মিশিয়ে খাওয়া।
- এক চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া। দিনে ২ বার। আপেল সাইডার ভিনেগারে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে।
- গাজরের জুস খাওয়া যেতে পারে।
- খান হলুদের গুঁড়া। পানির সাথে মিশিয়ে অথবা মধুর সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন। এটি আমাশয় থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে সাহায্য করবে।
- পেঁপে খান। পাকা পেঁপে অন্ত্র পরিষ্কার করতে কাজ করে। এবং এটি প্রচলিত একটি পদ্ধতি।
- ১০-১৫ মিনিট পরপর বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
- অন্যদের মধ্যে যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে, তার জন্য প্রতিবার শৌচ কাজ শেষে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন। কোনো কিছু ধরার আগে, খাবার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিবেন।
অন্যদের জন্য সতর্কতা
যেহেতু আমাশয় একটি ছোঁয়াচে রোগ, সেহেতু আশেপাশের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাশয় রোগী যেসব জায়গায় বসবে, যেসব জিনিস স্পর্শ করবে, যে পুকুরে বা নদীতে গোসল করবে, সেসব জায়গায় যাওয়া ও জিনিসপত্র ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে।
যদি তা করেও ফেলুন, তাহলে অন্য কোনো কিছু ধরার আগে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
পালিত পশুপাখি এতে আক্রান্ত থাকলে সেই পশুপাখিকে আলাদা রাখুন। এবং সেগুলোর পরিচর্যা করা শেষে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
আমাশয় বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় না। এটি আক্রান্ত কারও মল ও স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
শেষকথা
আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা করার পরও যদি রোগীর অবস্থার উন্নতি না হয় ও আমাশয় এক মাসের বেশি সময় চলতে থাকে, তাহলে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।