শীতকালীন স্কুল টিফিন কেমন হওয়া উচিত
স্কুল টিফিন ত স্কুল টিফিন ই! শীতকালে আবার স্কুল টিফিনে আলাদা কি হবে!
যারা জানেন না তাদের জন্য ই আজকের এই টিফিন মেনু নিয়ে কথা বলছি। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে শীতকালে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়, বাচ্চাদেরও কমে যায়। এই সময় পানি গ্রহনের পরিমান কমে যায় ফলে শিশুদের ভেতর শুষ্ক ত্বক এবং ডিহাইড্রেশন দেখা যায়।
এই সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যে,
১. শিশুর শরীরের তাপমাত্রা ঠিক আছে কিনা
২. শিশুর দেহে পানি গ্রহনের পরিমান ঠিক আছে কিনা
৩. শিশুর ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যাচ্ছে কিনা
৪. পর্যাপ্ত এন্টিঅক্সিডেন্টের প্রাপ্তি হচ্ছে কিনা
এই সব দিক বিবেচনায় রাখতে সারাদিনের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি দিতে হবে আবহাওয়া উপযোগী টিফিন। কারন দিনের একটা বড় অংশ স্কুলে কেটে যায়। সকালের দিকে তাপমাত্রা কম থাকে তাই এই সময় শিশুদের খাবারের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
কেমন হবে সকালের টিফিন??
১. ব্রোকলি চিকেন টিফিনঃ
ছোট চিকেন পিস মেরিনেট করে তেলে শ্যালো ফ্রাই করে নিবেন। সাথে হালকা বয়েল করা ৩/৪ পিস ব্রোকলি কে মশলা দিয়ে ফ্রাই / সতে করে নিবেন।
কারন: ব্রোকলি তে আছে প্রচুর আয়রন ও ক্যালসিয়াম। যেসকল শিশু দুধ খেতে চায় না বা পারে না তাদের জন্য ব্রোকলি এই শীতের সময়ে উপকারী নাস্তা। শরীরের তাপমাত্রাও ঠিক থাকবে।
২. পালংশাকের বড়াঃ
সেদ্ধ মসুর ডাল/ মুগ ডাল সাথে পালংশাক কুচি করে প্রয়োজনীয় মশলা, চালের গুড়া বা বেসন, ডিম দিয়ে পাকোড়া করে দেয়া যেতে পারে। এই ধরনের বড়া বা পাকোড়ার সাথে অবশ্যই সালাদ হিসেবে গাজর বা ফল রাখবেন। শসা খেলে ঠাণ্ডা লাগে অনেক শিশুর। তাই এর বদলে গাজর, আপেল, পেয়ারা সালাদে রাখতে পারেন।
কারন: পালং শাকে প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম ও বাচ্চাদের মেন্টাল হেলথ ভালো রাখতে কাজ করে।
৩. মাছের চপ / কাবাবঃ
মাছের সাথে কাচা কলা কে ম্যাশ করে প্রয়োজনীয় মশলা, ডিম দিয়ে বানিয়ে নিবেন মাছের চপ বা কাবাব। এই দিনে সাথে অল্প ভাজা চিনা বাদামও দিবেন।
কারন: যখনি আপনি বাদাম ও মাছ একি দিনে নাস্তায় রাখেন তাহলে সেই মেনু হয়ে যাবে উচ্চ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মেনু। আর শীতে ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়। তাই ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজ করে এই ফ্যাটি এসিড।
৪. সবজি নুডুলসঃ
১ ভাগ নুডুলস ও ২ ভাগ সবজি দিয়ে করে দিবেন এই মেনু। অল্প নুডুলস থাকবে এবং সবজি থাকবে ৩ রকমের ( গাজর, পাতাকপি, ফুলকপি) । নামানোর ১ মিনিট আগে ধনেপাতা কুচি ছিটিয়ে দিবেন।
কারন: গাজরে উপস্থিত ক্যারোটিনয়েড ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। ব্রোকলি তে আছে আয়রন ও ক্যালসিয়াম। ধনেপাতায় আছে প্রচুর ভিটামিন কে। আর এই ভিটামিন কে পাওয়ার জন্য রান্নায় অনেকক্ষন আগে এড করার চেয়ে কাচা বা নামানোর মুহুর্তে দিলে উপকারী।
৫. ফুলকপির বড়াঃ
আলুর চপ না দিয়ে ফুলকপির বড়া করে দিন। সাথে সালাদ বা ফল ত থাকবেই।
কারন: ফুলকপি তে রয়েছে প্রচুর পরিমানে এন্টি অক্সিডেন্ট ও সালফার জাতীয় উপাদান যা খাবারের হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। এছাড়াও ফুলকপি তে পাবেন ভিটামিন বি, সি, কে যা রোগ প্রতিরোধেও কাজ করে!
ফ্যাটি লিভার থেকে বাঁচতে হলে কোন খাবার বাদ দিবেন
এভাবে ৫ দিনে ৫ টা মেনু আগে থেকে বাছাই করে রাখলে আপনার সাপ্তাহিক কাজের প্লান অনেকটাই গুছিয়ে নিতে পারবেন।
খেয়াল রাখবেন-
১. বাচ্চার টিফিনে বৈচিত্র্য থাকবে। পছন্দ করলেও একবার খাবার প্রায় প্রায় না। এতে খাবারে অনাগ্রহের পাশাপাশি পুষ্টিহীনতাও দেখা যাবে।
২. ডুবো তেলে ভাজা খাবার না ☠️! অল্প তেলে ভাজা, শ্যালো ফ্রাই, অথবা এয়ার ফ্রাই এ দিবেন।
৩. স্কুল টিফিনে আলু কে বাদ রাখবেন। আলুর চপ, আলুর ফ্রাই দিবেন না।
এর বদলে ডিম গাজর পাতাকপির পাকোড়া অথবা গাজর ফ্রাই দিবেন
৪. স্কুল পেট ভরে একটা খাওয়ার জায়গা না। অনেক খেলে শরীর ভারী হবে কাজের স্পৃহা কমে যাবে। স্কুল নিজে খাবার খাওয়া শেখা, সামাজিকতা শেখা, শেয়ারিং শেখা ও এনার্জি নিয়ে এক্টিভিটিস চালিয়ে নেয়ার জায়গা। তাই বক্স ভরে ভাত,খিচুড়ি, পোলাও দেয়ার প্রবনতা গুলো যতদূর সম্ভব পরিহার করবেন।
৫. ভাজা পোড়া খাবার দিলে সাথে অবশ্যই সালাদ দিবেন অথবা ফল দিবেন
এসিডিটি থাকলে খাবারের মেনু পালটে নিবেন।
তুলসি মধুর চা :: এই সময় অনেক শিশু কে চা খেতে দেয়া হয়। বড়দের দেখে ওরাও খেতে চায়। দিনের শুরুতে বা বিকালে এই চা দিতে পারেন। গরম পানিতে অল্প আদা কুচি দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে তাতে হালকা লিকার দিয়ে নামিয়ে নিবেন। এরপর তাতে তুলসি পাতা কুচি করে অল্প মধু মিশিয়ে নেড়ে নিলেই হয়ে যাবে।
এই সময় আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারনে ঠান্ডা, সর্দি, কাশি লেগেই থাকে। এই তুলসী মধুর চা ঠান্ডাজনিত অসুখ গুলো কে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও স্যুপ বা সালাদেও এই তুলসি পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
এই সময় টিফিনে প্রচুর পানি অথবা গরম দুধ ও দিতে পারেন। সেই সাথে দিনের প্রথম অংশে পানি বেশি রাখবেন মানে বিকেল ৫ টার ভেতর পানি ও পানি জাতীয় খাবার বেশি খাবে। একবার স্যুপ, একবার পাতলা ডাল লেবু দিয়ে, আরেকবার ডাবের পানি বা কমলার জুস। কারন সন্ধ্যা থেকে এমনিও তাপমাত্রার কারনে পানি গ্রহনের চাহিদা কমতে থাকে। আর রাতেও বিছানা ভেজানোর প্রবনতা থাকে না।
উপরের পরামর্শ গুলো মেনে চলার ইচ্ছা শক্তি ই পারে আপনাকে এগিয়ে নিতে শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি রক্ষায় টিফিন তৈরিতে।
একজন মা একজন সংসারের খাদ্যমন্ত্রী তার ডিপার্টমেন্ট এই রান্নাঘর একটা। তিনি চাইলেই অনেক কিছু পরিবর্তন করতে পারেন যদিও পরিবারের অন্য সদস্যদের কেও এগিয়ে আসতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসেই আমরা সঠিক খাদ্য তালিকা নির্বাচনের মাধ্যমে শিশুদের নিরাপদ স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারি।