ভ্রমণ বৃত্তান্ত - ভারত [ চেন্নাই-বেঙ্গালুরু-কোলকাতা ]
প্রথম : বর্ডার
যদি হিলি/গেদে/সোনা মসজিদ এই বর্ডার গুলো খোলা থাকে,তাহলে এই বর্ডার গুলো দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন,ঝামেলা ও সময় কম লাগবে।আর শুধু বেনাপোল খোলা থাকলে,চেষ্টা করবেন ভোর 6টার মধ্যে বর্ডার যেতে,নয়তো বেলা করে গেলে এই বর্ডার পার হতে আপনার 6-7ঘন্টা লাগবে।ভিসাতে হিলি বর্ডার দিবেন,তাহলে সব বর্ডার দিয়ে যাওয়া-আসা করতে পারবেন।
দ্বিতীয় : যাতায়াত
যাওয়া :
বিমান▪︎ যদি বিমানে যেতে চান চেষ্টা করবেন যত আগে টিকিট কাটা যায়।ঢাকা টু চেন্নাই যেতে পারেন,আবার কলকাতা টু চেন্নাই টিকিট কেটে যেতে পারেন।বোর্ডিং পাসে কোন টাকা লাগে না।আর সঠিক ভাড়া বলা যাবে না,কারণ দাম সবসময় উঠা-নামা করে। সময় 2-3ঘন্টার মতো লাগবে।
ট্রেন▪︎রাজশাহী থেকে চেন্নাই বেনাপোল বর্ডার এর পথ বলি।আপনি যদি বেনাপোল বর্ডার দিয়ে যান,তাহলে প্রথমে রাজশাহী থেকে যশোর ট্রেনে যাবেন,তারপর প্রতি(বৃহস্পতিবার ও রবিবার) যশোর থেকে কলকাতা হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত ট্রেন যায় দুপুর 2টার দিকে,সেই ট্রেনে হাওড়া রেল স্টেশন যেতে পারেন।আবার রাজশাহী টু কলকাতা দেশ ট্রাভেলের বাস যায় ওইটাতেও কলকাতা পর্যন্ত যেতে পারেন।তারপর হাওড়া টু চেন্নাই ট্রেনে যাবেন (সময় 27ঘন্টা লাগবে)।সবগুলো ট্রেনের টিকিট যত আগে কাটার চেষ্টা করবেন।
আসা :
আসার সময় চেন্নাই টু কলকাতা ট্রেনে আসলেন।তারপর কলকাতা টু বেনাপোল বর্ডার বাসে আসতে পারেন।আবার কলকাতা টু বেনাপোল অন্যভাবে আসা যায়,প্রথমে আপনি হাওড়া স্টেশন নেমে বাস বা টেক্সি নিয়ে শিয়ালদহ রেল স্টেশন আসবেন,তারপর শিয়ালদহ টু বনগাঁ ট্রেনে আসবেন,তারপর বনগাঁ টু বেনাপোল টাক্সি নিয়ে যেতে পারবেন।আসার সময় ও বেনাপোল বর্ডার দিয়ে আসলে,ভোরে 6টা মধ্যে নামার চেষ্টা করবেন তাহলে দ্রুত ইমিগ্রেশন শেষ করতে পারবেন।
তৃতীয় : অর্থ
আপনি দেশ থেকে ডলার কিনে নিয়ে,ওখানে ভাঙ্গিয়ে খরচ করতে পারেন বা টাকা নিয়ে ভাঙ্গাতে পারেন।কিন্ত এই দুইটা পদ্ধতিতে আপনার অনেক টাকা লস যাবে।সবচেয়ে সহজ ও লাভজনক পদ্ধতি হবে,আপনার ডুয়েল কারেন্সির একটা কার্ড নিয়ে ব্যবহার করা।সেক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করবেন,আপনি সেই ব্যাংক থেকেই কার্ড নিবেন,যেখানে আপনি সাথে সাথে ডলার ইন্ডোজ করতে পারবেন।এমন অনেক ব্যাংক আছে, যারা আপনাকে সাথে সাথে কার্ড দিবে,কিন্ত যেটা আপনার জরুরি প্রয়োজন ডলার ইন্ডোজ,সেইটা করতে তারা 15দিন সময় নিবে আবার লিমিট ও কম দিবে,তাই যে ব্যাংক সাথে সাথে ডলার ইন্ডোজ ও দশ হাজার ডলার লিমিট দিবে,সেই ব্যাংকে ডুয়েল কারেন্সির একাউন্ট করবেন।
একাউন্ট করতে আপনার 2 কপি পাসপোর্ট ছবি,NID কার্ড,আর নমনীর 1 কপি পাসপোর্ট ছবি,NID card লাগবে।অনেক ব্যাংক TIN চাইবে,সেই ব্যাংকে একাউন্ট করবেন না।
বিশ্বব্যাপী নতুন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে মাংকিপক্স
অনেকে বলবে হুন্ডিতে টাকা দিলে রুপি বেশি পাওয়া যায়,এটা সত্যি ছিলো।কিন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন গোলযোগের পর থেকে হুন্ডিতে অনেক কম রুপি দিচ্ছে।আমি card এ 100 টাকাই 78-79 রুপি পেয়েছি,সেই জায়গাই বেনাপোল বর্ডারে দিচ্ছিলো 69,বর্ডারের বাইরে 70 আর চেন্নাইয়ে 65 রুপি হুন্ডিতে দিচ্ছিলো,এই ছিলো পার্থক্য,তাছাড়া টাকা নিয়ে বেড়ানোর রিস্ক আছে,তাই সবদিক বিবেচনা করে ডুয়েল কারেন্সির কার্ড নেওয়া উত্তম।
চতুর্থ : সিম
আপনি এয়ারটেল সিম নিতে পারেন। তবে বর্ডারে দাম বেশি নিবে।আপনি কলকাতা গিয়ে সিম নিতে পারেন,ওখানে সিমের দাম 39 রুপি নিবে+অফার প্রতিদিন 1gb সাথে টকটাইম ফ্রি 239 রুপি=278 রুপি নিবে।
পঞ্চম : রুম
মেডিকেলের আশেপাশে আপনি অনেক রুম পাবেন। আপনার পছন্দমতো রুম নিবেন।রান্নার সকল সামগ্রী তারাই দিবে।
ষষ্ঠ : মেডিকেল
টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল (খরচ বেশি,দ্রুত কাজ)
এপোলো হাসপাতাল (খরচ বেশি,দ্রুত কাজ)
নারায়াণা (খরচ বেশির চেয়ে একটু কম,দ্রুত কাজ)
সিএমসি,ভেলোর (খরচ কম,কাজ দেরী)
এর বাইরেও অনেক স্পেশালাইজড হাসপাতাল আছে,আপনারা আপনাদের সমস্যা অনুযায়ী মেডিকেল নির্ধারণ করবেন।এক মাসের অধিক সময় থাকার মতো সময় থাকলে,আপনারা সিএমসি তে যেতে পারেন।
সপ্তম : ঔষধ
মেডিসিন ক্লিনিকের বাইরে কোন ফার্মেসিতে কিনতে পারেন।ক্লিনিকের ফার্মেসিতে আপনাকে ছাড় দিবেনা।বাইরে যে ফার্মেসি 20% ছাড় ও দেশে কুরিয়ারের তাদের নিজস্ব ব্যবস্থা আছে,সেখানেই ঔষধ কিনবেন।
অষ্টম : খাদ্য
কলকাতা বাদে ভারতের যে প্রদেশেই আপনি যাবেন,তাদের রান্না খেতে পারবেন না।প্রতিটা প্রদেশের রান্নার স্বাদ ভিন্ন,যা আমাদের দেশের রান্নার স্বাদের সম্পূর্ণ বিপরীত।তাই নিজে রান্না করে খাওয়ার এবং বাইরের খাবার রুচিসম্মত হবেনা,এই মন-মানসিকতা তৈরি করে যাবেন।তারা যে রান্নাই হাত দিবে,সেইটা আপনি আর খেতে পারবেন না কোনভাবেই।প্রতিটা প্রদেশের কিছু কিছু আইটেম হয়তো খেতে পারবেন,কিন্ত সেইটা আপনাকে খুজে বের করতে হবে।
নবম : ভাষা
আপনি যদি হিন্দি ও ইংরেজি ভাষা বুঝতে পারেন এবং বোঝানোর মতো বলতে পারেন,তাহলে আর কোন সমস্যা হবে না।কলকাতা হাওড়া স্টেশন থেকেই বাংলা বাদ,তারপর থেকে হিন্দি বা ইংরেজিতে আপনাকে কমিউনিকেশন করতে হবে।
দশম : নিরাপত্তা
কলকাতা মানে যেখানে বাঙালির বেশি ছায়া পড়বে,সেখানে দুর্নীতি,ছিনতাই,অপরাধ হবে,এইটা আপনাকে মেনে নিতে হবে।এ বাদে আমার অভিজ্ঞতাই মনে হয় না আপনাকে আর কোন জায়গাই নিরাপত্তাজনিত সমস্যাই ভুগতে হবে।এ জায়গাই বেশি সাবধান ও অন্য প্রদেশেও সচেতন থাকবেন,আশা করি সমস্যা হবে না।
[ বি:দ্র: আপনি যদি হিন্দি ও ইংরেজী ভাষাতে কমিউনিকেশন করতে পারেন এবং ফোনের ব্যবহার সঠিকভাবে জানা থাকলে,আমার মনে হয় দালাল বা তৃতীয় ব্যক্তির কোন প্রয়োজন নাই।আপনি নিজে নিজেই সাহস নিয়ে সব কাজ শুরু করেন,দেখবেন কোন ঝামেলা নাই,ভয়ের ও কিছু নাই। আপনার ভ্রমণ সহজ ও সুন্দর হোক ]