ত্বকের যত্নে মানুষ কতকিছুই না করে। কত সময় আর শ্রম ব্যয় করে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে। কিন্তু নিজেদের ঘরেই যে ত্বকের যত্ন নেয়ার এক কার্যকর উপকরণ আছে, তা কি সবাই জানে? বলছি টমেটোর কথা। টমেটোকে আমরা শুধু খাবারে ব্যবহার করি। তরকারি, ভর্তা হিসেবে টমেটোর ব্যবহার বেশি হয় আমাদের দেশে। কিন্তু শরীরের বাহ্যিক যত্ন নিতেও টমেটো অনেক উপকারী। ত্বকে টমেটো লাগানোর রয়েছে অনেক উপকারিতা। শরীরের ত্বক ও মুখে টমেটো লাগানোর উপকারিতা ও টমেটোর গুণাগুণ নিয়ে অসাধারণ এক লাইফস্টাইল হ্যাক আপনাদের জানাবো।
মুখে টমেটো লাগানোর উপকারিতা ও গুণাগুণ
টসটসে রসপূর্ণ একটি সবজি টমেটো। শীতকালে টমেটোর দেখা বেশি পাওয়া যায়। কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায় টমেটোর গুণাগুণ রয়েছে। টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি৫, বি৬, বি৯, ভিটামিন ই, ভিটামিন সি, লাইকোপিন (Lycopene), লুটিন, বিটা ক্যারোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বিভিন্ন এনজাইম ও অতি গুরুত্বপূর্ণ এন্টিঅক্সিডেন্ট।
এত উপাদানে ভরপুর এই সবজি নিয়মিত খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, উচ্চ রক্তচাপের মতো মরণঘাতী রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় দেহের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ক্রিয়া বিক্রিয়ায় টমেটো অবদান রাখে। পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি, হজমের সমস্যা সমাধানে টমেটোর গুণ রয়েছে।
শুধু দেহের ভিতরেরই নয়, দেহের বাহ্যিক কাজেও টমেটো দারুণ উপকারী। ত্বক মানবদেহের বাহ্যিক অংশ। ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নতিতেও টমেটোর উপাদানগুলো কার্যকর। গবেষণায় এটাও দেখা গিয়েছে যে, স্কিন ক্যান্সারের মতো ত্বকের ভয়ংকর রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে টমেটো ভূমিকা পালন করে।
তাহলে আপনার মহামূল্যবান ত্বকের যত্ন নিতে অযথা বেশি সময় ও শ্রম কেন দিবেন? আপনার রান্নাঘরেই পাওয়া যাচ্ছে একটি উপকরণ, যেটা আপনার জন্য খুবই উপকারী, তাহলে সেটাই ব্যবহার করে দেখুন। টমেটো এখন সব ঋতুতেই পাওয়া যায়, দামও কম। হাতের নাগালে থাকা এই জিনিসটি ব্যবহার করে আপনার ত্বকের যত্ন নিন, ত্বকের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলুন।
মুখে টমেটো লাগানোর উপকারিতা গুলো দেখুন। তারপর আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন আসলে এটা কত উপকারী।
মুখে টমেটো লাগানোর উপকারিতা:-
স্কিন ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা দিতে
অতিরিক্ত রোদে পোড়া ত্বকে স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে বেশি। আপনাকে এই ঝুঁকি থেকে নিরাপদে রাখবে টমেটো। পাকা টমেটোতে রয়েছে লাইকোপিন নামক উপাদান, যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কার্যকর বলে পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে। শুধু মুখেই নয়, শরীরের ত্বকের সর্বত্র টমেটো লাগালে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
ত্বককে রোদের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে
গ্রীষ্মকালের সূর্যের তাপ থাকে বেশি। অতিরিক্ত তাপ বেশিক্ষণ সরাসরি ত্বকে লাগলে ত্বকে পোড়া দাগ হয়। মুখ মলিন হয়ে যায়, সৌন্দর্য হারায়। আবার অতিরিক্ত রোদে পোড়া ত্বকে স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকিও থাকে। এই সমস্যা থেকে আপনার ত্বককে সুরক্ষা দিবে টমেটো। কারণ এতে রয়েছে লাইকোপিন যা রোদে পোড়া ভাব দূর করতে খুবই কার্যকরী।
মুখের ত্বকে ক্ষত সারাতে
আঘাত লাগলে, রোদে পুড়লে, ব্রণের কারণে ত্বকে ক্ষত ও গর্তের সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা দূর করতে টমেটোর ভিটামিন সি অধিক কার্যকর। ত্বকের যত্নের জন্য যত স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট বাজারে পাওয়া যায়, তার সবগুলোতেই ভিটামিন সি থাকে। আর আপনি ঘরের সাধারণ একটা সবজিতেই তা পাচ্ছেন। তাহলে টমেটোর অবদানকে অস্বীকার করবেন কীভাবে?
প্রদাহ প্রতিরোধ করতে
মুখে ও ত্বকে ফোলা ভাব, ফুলে যাওয়া, চুলকানি, ভারী মেক-আপ লাগানোর কারণে জ্বালাপোড়া, ব্যথার মতো সমস্যা থেকে সুরক্ষা দিবে টমেটোর মধ্যে থাকা প্রদাহ প্রতিরোধী উপাদান।
উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে
এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, বিটা ক্যারোটিন এই উপাদানগুলো প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। যা আপনার ত্বককে পরিষ্কার করে মুখের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তুলবে।
মৃত কোষ দূর ও নতুন কোষ সৃষ্টিতে
পরিবেশের ধুলাবালি, ধোঁয়া ত্বকে মৃত কোষের সৃষ্টি করে যা ত্বকের উপর স্তর আকারে জমা হয়। ফলে চেহারা মলিন ও দেখতে বয়স্কদের মতো লাগে। এই মৃত কোষ দূর করতে টমেটোর উপকারী গুণাগুণ গুলো কাজ করে। মৃত কোষ সরিয়ে দিয়ে সেখানে নতুন ও সতেজ কোষ সৃষ্টি করে ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখে।
তৈলাক্ত অবস্থা কাটাতে
পরিবেশের ধুলাবালি, শরীরের ঘামের কারণে ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ হানা দেয় বেশি। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করুন টমেটো।
বয়সের ছাপ কমাতে
অতিরিক্ত পরিশ্রম, ধুলাবালি, ময়লার জন্য ত্বকে বলিরেখা, ত্বক কুঁচকে যাওয়া, ত্বকে ময়লা স্তর জমা হওয়ায় চেহারা দেখতে বয়স্ক মানুষের মতো লাগে। টমেটোতে থাকা ভিটামিন বি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট এই সমস্যা থেকে রেহাই দিবে সহজেই।
টমেটোকে শুধু খাওয়ার সবজি হিসেবে ব্যবহার না করে এটি মাঝেমধ্যে আপনার ত্বকেও লাগান। তাতে ত্বকে ও মুখে টমেটো লাগানোর উপকারিতা পাবেন যা আপনার ত্বককে করে তুলবে আরও উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত।