ডায়াবেটিস রোগীরা কি খাবেন?
বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। ডায়াবেটিসে একবার কেউ আক্রান্ত হলে যেন এই রোগটি যাওয়ার নাম করে না।সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং সঠিক লাইফস্টাইল এর কারণে ডায়াবেটিস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখা গেলে শরীরের জন্য এটি বড় একটা হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তাই অবশ্যই ডায়াবেটিসকে কিছু নিয়মকানুন মানার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কিছু খাদ্য তালিকা রয়েছে যেগুলো সঠিকভাবে খাওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।আজকের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন ডায়াবেটিস রোগীরা কোন ধরনের খাবার খাবেন এবং ডায়াবেটিস রোগীরা কোন ধরনের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবে।
ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা
যারা একবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে যায় তারা সব ধরনের খাবার গ্রহণ করতে পারেন না।তাদেরকে কিছু খাবার বাছাই করার মাধ্যমে খেতে হয়। ডায়াবেটিস রোগীরা লাল চালের ভাত, গমের আটার রুটি,বাদাম, সবজি, বুট এই ধরনের খাবার গুলো গ্রহন করতে পারেন কেননা এই ধরনের খাবার গুলো গ্রহন করার মাধ্যমে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা ধীরে ধীরে কমে।
যারা ডায়াবেটিস রোগী রয়েছেন তাদের জন্য আমিষ থেকে আসবে মোট ক্যালরির ২০%, আর ৩০% আসবে ফ্যাট থেকে। তাই এই ক্ষেত্রে অবশ্যই নিয়মানুবর্তিতা হতে হবে।তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক ডায়াবেটিস রোগীরা কোন ধরনের খাবার বেশি খাবে এবং কোন ধরনের খাবার কম খাবে:-
ডায়াবেটিস রোগীরা প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে পারেন
অনেক সমীক্ষায় এটা প্রমাণিত যে বেশি প্রোটিন যুক্ত খাবার গুলো রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখে।ইনসুলিন মাত্রা বৃদ্ধির জন্য যেটা সহায়ক সেটার ভারসাম্য বজায় রাখে। তাই বলে অতিরিক্ত হারে কোন সময় প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করবেন না। নিয়মমাফিক প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করে ডায়াবেটিস রোগীরা নিজেদেরকে সুস্থ রাখতে পারেন।ডায়াবেটিস রোগীরা চাইলে এই ধরনের খাবার গুলো বেশি পরিমাণে খেতে পারেনঃ-
➡️চর্বিযুক্ত খাবারের মধ্যে বাদাম অলিভ অয়েল এবং কিছু মাছের তেল খেতে পারেন।
➡️বেশি পরিমাণে শাকসবজি খেতে হবে।শাকসবজি টাটকা এবং রঙ্গিন হলে অনেকটা ভালো হয় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য।
➡️দেশি মুরগি এবং দেশি মাছ গুলো বেশি পরিমাণে খেতে পারেন।
➡️প্রোটিন জাতীয় খাবারের মধ্যে ডিম দুধ এবং টক দই খেতে পারেন।
ডায়াবেটিস রোগ হলে কোন খাবার কম খাবেন
যারা ডায়াবেটিস রোগী আছেন তাদেরকে অবশ্যই মিষ্টিজাতীয় যেকোনো ধরনের খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে। কেননা অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।
শর্করা খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিয়মমাফিক খেতে হবে। আপনি পাউরুটি, চাল ভাত,পাস্তা, ইত্যাদি খাবার বেশি পরিমাণে না খেয়ে বাদামি চালের ভাত,বার্লি ,গম জাতীয় শস্য দানা এই ধরনের খাবার বেশি খাবেন।
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কোন সময় এমন কোন খাবার খাওয়া যাবেনা যে খাবার গ্রহণের মাধ্যমে রক্তের সুগারের মাত্রা অতিরিক্ত হারে বাড়তে পারে।ডায়াবেটিস রোগীরা অবশ্যই এই খাবারগুলো কম পরিমাণে খাবেন। যেমনঃ-
➡️ অতিরিক্ত রান্না করা খাবার বা ডিপ ফ্রাই করা খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবেনা।
➡️ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবেনা।
➡️প্রক্রিয়াজাত বিভিন্ন ধরনের মাছ মাংস বেশি পরিমাণে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করার খাবার সমুহ
ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়েট টেবিল
১.সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এক গ্লাস পানিতে আধা চামচ মেথি গুঁড়া এবং এর সাথে রাতে বার্লি পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে নিয়ে ছেকে পান করতে পারেন।এর সাথে আপনারা ৬ থেকে ৭ টি বাদাম এবং আখরোট যুক্ত করতে পারেন।
২.তারপরে আপনারা একঘন্টা পরে চিনিমুক্ত চা এবং হালকা মিষ্টি সহ দুই তিনটা বিস্কুট খেতে পারেন।
৩.ডায়াবেটিস রোগীরা তাদের ডায়েট তালিকায় দুপুরের খাবারের আগে পেয়ারা, আপেল, কমলা ও পেঁপে খেতে পারেন।
৪.দুপুরের খাবারে ডায়াবেটিস রোগীরা এক বাটি সবজি, এক বাটি মসুর, এক বাটি দই এবং এক বাটি সালাদ খান।
৫.সন্ধ্যার খাদ্যতালিকায় আপনারা চিনি ছাড়া চা এবং হালকা মিষ্টি বিস্কুট ব্যবহার করতে পারেন।
৬.রাতের খাবারের দুইটি রুটি এবং একবাটি সবজি রাখতে পারেন।
৭.ডায়াবেটিস রোগীরা ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক কাপ গরম দুধ এবং তার সাথে হালকা হলুদ মিশিয়ে পান করতে পারেন।
ডায়বেটিস রোগীদের সকালের খাদ্য তালিকা
ডায়াবেটিস রোগী যারা রয়েছে তাদের জন্য সকালের খাদ্য তালিকায় সকালের নাস্তায় ফল থাকাটা খুবই জরুরী।ফল আমাদের শরীরের কোন ধরনের ক্ষতি ছাড়াই ক্যালরি চাহিদা পূরণ করে থাকে। আপেল, কলা, মালটা স্ট্রবেরি এই সকল খাবারগুলো সকালের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
সকালের নাস্তাই আপনারা টক দই রাখতে পারেন।টক দই হজম শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে এবং শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করে থাকে।
ডায়াবেটিস রোগীদের সকালের নাস্তা ৮ টা- ৮ঃ৩০
রুটি ১ সারভিং -একটা গমের রুটি
দুধ -১ কাপ ফ্যাট ছাড়া দুধ
ডিম -একটি মুরগী অথবা হাঁসের ডিম রাখতে পারেন
শাকসবজি -এককাপ রঙিন শাকসবজি রাখতে পারেন
ডায়াবেটিস রোগীদের দুপুরের খাদ্য তালিকা
ডায়াবেটিস রোগীরা দুপুরের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের সালাদ রাখতে পারেন।শসা, টমেটো, লেটুস পাতা, গাজর বিভিন্ন ধরনের সালাদ তৈরি করে রাখতে পারেন।
আপনারা হালকা পরিমাণ মাছ-মাংস দুপুরের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। মুরগির মাংস আপনারা এক বা দুই পিচ রাখতে পারেন এবং মাছ ও এক পিস খেতে পারেন। আর দুপুরে যদি ভাত খান তাহলে বেশি খাবেন না অবশ্যই এক কাপ খেতে হবে।দুপুরের খাবারের সাথে আপনারা হালকা কিছু ফল খেতে পারেন।
ডায়াবেটিস রোগীদের দুপুরের খাবার ১:৩০ - ২ টা
ভাত - দেড় কাপ
মাছ -মাংস ৬০ গ্রাম পর্যন্ত খেতে পারেন তবে অবশ্যই ফ্যাট ছাড়া হতে হবে
শাকসবজি - বিভিন্ন ধরনের সবজি মিলিয়ে দেড় কাপ খেতে পারেন
ডাল -এক কাপ পরিমান ঘন ডাল রাখতে পারেন
ডায়াবেটিস রোগীদের রাতের খাদ্য তালিকা
ডায়বেটিস রোগী যারা রয়েছেন তাদের রাতে ভাত খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। তারা রাতে তিন থেকে চারটি গমের রুটির সাথে হালকা শাকসবজি খেতে পারেন এতে করে শরীরের পক্ষে ভালো।
ডায়াবেটিস রোগী যারা রয়েছে তারা স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে এবং পারলে খাওয়ার পর পর কিছু সময় হেঁটে আসতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীর রাতের খাবার (৯ টা- ৯ঃ৩০)
রুটি অথবা ভাত - ভাত খেলে এককাপ এবং রুটি খেলে তিন থেকে চারটি
মাছ মাংস -৬০ গ্রাম পরিমাণ মাছ-মাংস খেতে হবে অবশ্যই ফ্যাট ছাড়া
শাকসবজি- বিভিন্ন ধরনের সবজি মিলিয়ে দেড় কাপ সবজি খেতে পারেন
সিজনাল ফল -১ থেকে ২ টি সিজনাল ফল খেতে পারেন
শেষ কথা,
ডায়াবেটিস রোগে একবারে যারা পড়ে যায় তারাই জানে শুধুমাত্র এই রোগের ভয়াবহতা।তবে খাদ্যতালিকায় কিছু পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্যকর জীবন অভ্যাসের ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা নিজেদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।আশা করি আজকের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে ডায়বেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকা কেমন হওয়া উচিত সেটা সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন।তার পরেও যদি কোনো ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।
এই নিবন্ধটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।